ঢাকা, ১৯ মার্চ – আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ‘চাইম’ ব্যান্ডের প্রধান ভোকালিস্ট খালিদ হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দুপুরে গোপালগঞ্জের এস এম মডেল সরকারি হাই স্কুল মাঠে বাদ জোহর জানাজা শেষে গেটপাড়া এলাকার পৌর কবরস্থানে মা-বাবার পাশে তাকে শায়িত করা হয়।
জানাজার আগে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোহসিন উদ্দিন, বড় ভাই মেজবা উদ্দিন হাসান, জেলা উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় সংগীতশিল্পী খালিদ হোসনকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রাত ১১টায় ঢাকার গ্রিন রোড জামে মসজিদে খালিদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ নিয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের বাসায় পৌঁছান পরিবারের সদস্যরা। মরেদেহ গোপালগঞ্জ পৌঁছালে সহপাঠী, বন্ধু ও ভক্তরা শেষবারের মতো খালিদকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন।
মঙ্গলবার বাদ জোহর গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদে খালিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পড়ে যে বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন সেই বিদ্যালয় এস এম মডেল সরকারি হাই স্কুল মাঠে সংগীতশিল্পীর জানাজার আয়োজন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জেলা কোর্ট মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন- গীতিকার-সুরকার প্রিন্স মাহমুদ, সংগীতশিল্পী খালিদের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী, গোপালগঞ্জের স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য, স্থানীয় লোকজনসহ শত শত মানুষ।
জানাজা শেষে খালিদের মরদেহে গেটপাড়া এলাকার পৌর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে শায়িত করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা উদীচীর সভাপতি ও সংগীতশিল্পী বন্ধু মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, খালিদ মা-বাবার সাত সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। তার মা আনোয়ারা বেগম ও বাবা বি এ হেমায়েত উদ্দিন কেউই বেঁচে নেই। বড় ভাই ড. মহিউদ্দিন ফারুক বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী অ্যাসোসিয়েশন (বেলা) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি ১৫ বছর আগে মারা যান। এক পুত্র সন্তান অরিক মোল্লাকে নিয়ে স্ত্রী শামীমা জামান আমেরিকা বসবাস করেন। খালিদ সাইফুল্লাহ বাংলাদশেই থাকতেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা এক সঙ্গে পড়ালেখা করতাম। খালিদ ছাত্র জীবন থেকে গান গাইতেন। একদিন ওর গান শোনার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে ছুটির আবেদন করেছিলাম, কিন্তু, সেদিন প্রধান শিক্ষক ছুটি দেননি। ছুটি শেষে আমরা সবাই মিলে তার গান শুনতাম। বাল্যবন্ধু খালিদ আজ চলে গেল। তার অভাব কোনভাবেই পূরণ হবার না।
গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ বলেন, খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে আমি ছোট বেলায় গোপালগঞ্জে এসেছি। আজও এসেছিখালিদ ভাইয়ের জন্য, তবে ভাইকে চির বিদায় জানাতে। খালিদ ভাইয়ের শূন্যতা অন্যকারো দ্বারা পূরণ হবে না।
খালিদ হোসেন ১৯৬৩ সালে গোপালগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা তার এখানেই কেটেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ার সময় থেকেই গানের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার। খালিদ ১৯৭৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৮১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর ঢাকায় যান। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করেন। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী ১৯৮১ সাল থেকে গানের জগতে যাত্রা করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ‘চাইম’ ব্যান্ডে যোগ দেন।
‘সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’-র মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী খালিদ। একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে অল্প সময়েই খ্যাতি পান তিনি।
আইএ/ ১৯ মার্চ ২০২৪