এক সময় শোনা যেত পুলিশের চাকরি পেতে অনেক টাকা গুনতে হয়। রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। নিজের যা রোজগার হয় তার সবটাই ব্যয় হয় সংসারে। চারটি ছেলে- মেয়ে আমার। ছেলের পুলিশের চাকরির জন্যে এতো টাকা কই পাব। এমন কঠিন চিন্তা এসে মাথার উপর ভর করে। কিন্তু, কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই আমার ছেলে পুলিশের চাকরি পাওয়াতে আমার চিন্তা ভাবনা পাল্টে গেলো! টাকা তদবির ছাড়া ছেলের চাকরি হলো মাথার উপর থেকে যেন চিন্তার একটা বুঝাই আর নাই-রবিবার দুপুরে এসব কথা বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের চাকরি পাওয়া আব্দুর রাজ্জাকের পিতা।
সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের মনিরবাগ গ্রামের আব্দুর রাকিব। গত ১৩ তারিখ পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পায় আব্দুর রাকিবের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় তিনি দোয়া করেন কৃতজ্ঞতা জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেনসহ পুলিশের সকল কর্মকর্তাদেরকে।
কথা হয় আব্দুর রাজ্জাকের মা মাসুমা বেগম তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক তাকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। শত কষ্টের মাঝেও লেখাপড়া করিয়েছি। আমার কষ্ট আর তার মেধা আজ এ সফলতা এনেছে। আমার ছেলের মেধা যাচাই-বাছাই করে। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে কনস্টেবল এ চাকরি দিয়েছেন। আমি ওনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলের চাকরির আবেদন অনলাইনে জমা দিতে খরচ হয়েছে ১২০ টাকা। এছাড়া আমার আর কোনো টাকা দিতে হয়নি। আশা করি, ভবিষ্যতে আমার ছেলে যেন আরও বড় হতে পারবে। পুলিশ সুপার যেন দোয়া করেন, আমিও দোয়া করি।’
এমন কথা যেন ৭১ জন অভিভাবকের হৃদয়ের কথা। এদিকে জানা যায়,গত বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ জানুয়ারি ২০২৪ এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ জেলায় শতভাগ মেধা, যোগ্যতার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নিয়োগ কার্যক্রমের সবগুলো ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৭১ জন প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৬০ জন পুরুষ আর ১১ জন নারী। সরাইল উপজেলার পাঁচজনের চাকরি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনস্ ড্রিল শেড নতুন চাকরি পাওয়া ছেলে- মেয়েদের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বিপিএম।
এ সময় নির্বাচিত ৬০ জন ছেলে ও ১১ জন মেয়ে রিক্রুটকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পুলিশ সুপারসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।