মাত্র ছয় বছর বয়সে পোলিও ভাইরাসের কারণে পোলিয়োমাইলাটিসে আক্রান্ত হন পল আলেকজান্ডার। এরপর থেকে জীবনের ৭০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন লোহার ফুসফুস দিয়ে। এই ৭০ বছর তাকে রাখা হয় লোহার তৈরি একটি সিলিন্ডারে।
রোববার ১৭ মার্চ আনন্দবাজার পত্রিকা’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সে সম্প্রতি মারা গেলেন সেই পল আলেকজান্ডার, যিনি ‘পোলিও পল’ নামে পরিচিত। তবে উত্তরসূরিদের জন্য তিনি রেখে গেছেন বিশাল সম্পত্তি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৬ সালের ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডালাসে জন্মগ্রহণ করেন পল। ১৯৫২ সালে মাত্র ৬ বছর বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর পোলিয়োমাইলাটিস ধরা পড়ে তার। তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে পলের দেহে। শ্বাসযন্ত্র পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছিল তার। কিন্তু পল হাল ছাড়েননি। কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য লোহার ফুসফুস বসানো হয়েছিল শরীরে।
২০২০ সালে ‘দ্য গার্ডিয়ান’এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে লেখা হয়েছিল, পোলিওর কারণে গলার নীচ থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় পলের। পরের ৭২ বছর কেটেছিল একটি লোহার সিলিন্ডারের ভিতর। সিলিন্ডারের বাইরে ছিল শুধু পলের মাথা। বালিশের উপর রাখা থাকত মাথা। গলা থেকে বাকি শরীর সিলিন্ডারের ভিতর।
যন্ত্রের মাধ্যমে সিলিন্ডারের ভিতর থেকে হাওয়া বার করে আনা হত। সিলিন্ডারের ভিতর বায়ুচাপ কমে যাওয়ায় প্রসারিত হত ফুসফুস। এ ভাবে চলত শ্বাসক্রিয়া। এত কিছুর পরও পল থামেননি। কলেজে গিয়েছেন। আইন নিয়ে পড়াশোনা করে আইনজীবী হয়েছেন। তিনি লেখকও। চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য সমাজমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তার বন্ধু। সেখানেও প্রায় এক লাখ ৪৩ হাজার ডলার অনুদান মিলেছে। বাংলাদেশী টাকায় যা, প্রায় দু’কোটি টাকা।
অনুদানকারীদের ধন্যবাদ জানান পলের ভাই ক্রিস্টোফার। তিনি লেখেন, ‘আপনাদের জন্যই আমার ভাই শেষ ক’বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়েছেন।’
বিশাল সম্পত্তি রেখে গিয়েছেন পল। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নামও রয়েছে তার। পলের থেকে বেশি সময় কেউ লোহার সিলিন্ডারের ভিতর বাঁচেননি। ২১ বছর বয়সে আইনে স্নাতক হন তিনি। তবে এক দিনও সশরীরে ক্লাসে যেতে পারেননি। সেই দিক থেকেও তিনি অনেকটাই আলাদা।
ডালাসের সাদার্ন মেথডিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করেছিলেন পল। তবে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেননি। এরপর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। পরে দশকের পর দশক কোর্টে গিয়ে মক্কেলদের হয়ে লড়াই করেন পল। মামলা জিতেছেন। কোট-প্যান্ট পরে হুইল চেয়ারে চেপে যেতেন তিনি।
দিনে কিছুটা সময় পল সেই সিলিন্ডারের বাইরে থাকতে পারতেন। সেই সময় কীভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেবেন, তার প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। শুনানির সময় নিজেই শ্বাস নিতেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে পল বলেছিলেন, ‘ছোটবেলাতেই বুঝেছিলাম, শারীরিক কসরত আমাকে দিয়ে হবে না। বাস্কেটবল কোনও দিন খেলতে পারব না। মাথা দিয়ে যে কাজ হয়, তা করতে পারব।’ পল করেও ছিলেন তাই। আইনজীবী হয়েছিলেন তিনি। জয় করেছিলেন প্রতিবন্ধকতা।