নয়াদিল্লি, ১৫ মার্চ – ভারতে সদ্য কার্যকর করা ধর্মভিত্তিক ‘বিতর্কিত’ নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগকে প্রত্যাখ্যান করেছে মোদী সরকার। শুক্রবার (১৫ মার্চ) ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করা মন্তব্যকে ‘ভুল ও অযৌক্তিক’ বলে দাবি করে।
শুক্রবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ভারতে ১১ মার্চ কার্যকর করা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এই আইন কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সব সম্প্রদায়ের জন্য আইনের অধীনে সমান আচরণ নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি। ভারত সেই নীতি ঠিকমতো কার্যকর করছে কি না তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
মার্কিন বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্য নাগরিকত্ব আইনের ভুল ও অযৌক্তিক ব্যাখ্যা। ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্য ও দেশভাগের পরবর্তী ইতিহাস নিয়ে যাদের সীমিত ধারণা রয়েছে, তাদের এ বিষয়ে বক্তব্য না দেওয়াই ভালো।
তিনি আরও বলেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আইনটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর বা তার আগে ভারতে আসা আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর করা হয়েছে। সিএএ’র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না।
‘সিএএ রাষ্ট্রহীনতার সমস্যা সমাধান করে, ভারতের সব নাগরিককে মানবিক মর্যাদা প্রদান করে ও মানবাধিকারকে সমর্থন করে। ভারতের সংবিধান দেশের সব নাগরিককে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়। সংখ্যালঘুদের প্রতি কোনো উদ্বেগ বা আচরণের কোনো ভিত্তি বা সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল আইনে পরিণত হয়েছিল ২০১৯ সালে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের মুখে সোমবার (১১ মার্চ) হঠাৎ করেই সিএএ চালু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিজেপি সরকার। ওই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অমুসলিম যেসব শরণার্থী ধর্মীয় উৎপীড়ন থেকে বাঁচতে এ দেশে এসেছেন, তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
সিএএ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর থেকেই ভারতজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের অভিযোগ, এই বিজ্ঞপ্তিতে যেসব বিধান রয়েছে, তা অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধানস্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকত্ব নীতি-বিরোধী।
বিরোধীদের আরও দাবি, লোকসভা নির্বাচনের মুখে এটি কার্যকর করার পিছনে বিজেপির নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। না হলে সাড়ে চার বছর আগে পাশ হয়ে যাওয়া আইনের বিজ্ঞপ্তি এখন জারি করা হল কেন? তবে বিরোধীদের সব সমালোচনা পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি সরকার।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৫ মার্চ ২০২৪