শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আশালাঙ্কার রেকর্ড জুটিতে দাপুটে এগুচ্ছিল শ্রীলংকা। তবে মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে এই জুটি ভাঙতেই যেন দিশেহারা হয়ে পড়ল শ্রীলংকা! টপাটপ বেশ কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। তবে শেষ হাসিটা শ্রীলংকাই হেসেছে।
শেষ দিকে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার কার্যকরী একটা ইনিংসের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটের জয় পেয়েছেন সফরকারীরা। এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা এখন ১-১ সমতা। সিরিজের প্রথম ম্যাচটা জিতেছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ এখন অলিখিত ফাইনাল। যারা জিতবে সিরিজ তাদের।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বেশ বড় স্কোরই গড়েছিল বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের ৬৮ ও তাওহিদ হৃদয়ের অপরাজিত ৯৬ রানের কল্যাণে ২৮৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। পরে বোলিংয়ে নেমে ৪৩ রানেই শ্রীলংকার তুলে নিলে মনে হচ্ছিল আজই বুঝি সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। কিন্তু পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আশালাঙ্কা সেই আশায় পুরো জল ঢেলে দিয়েছেন!
চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন দুজন। বাংলাদেশি বোলারদের তেমন কোনো সুযোগই না দিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১৮৫ রান তুলেছেন দুজন। যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে শ্রীলংকার সর্বোচ্চ জুটি এটা। মেহেদি হাসান মিরাজের কল্যাণে এই জুটি ভাঙলে লংকানদের উপর জেঁকে বসেছিল বাংলাদেশি বোলাররা।
পাথুম নিশাঙ্কা ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ফিরেছেন দলীয় ২২৮ রানের মাথায়। ১১৩ বল খেলে ১৩টি চার ৩টি ছয়ে ১১৪ রান করেছেন নিশাঙ্কা। খানিক বাদে ৯৩ বলে ৬টি চার ৪টি ছয়ে ৯১ রান করা আশালাঙ্কাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ।
জানিথ লিয়ানাগেও এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তানজিম হাসান সাকিবের একমাত্র শিকার হওয়ার আগে ফিরেছেন ৯ রান করে। তখন বেশ জমে উঠেছিল ম্যাচ। মনে হচ্ছিল, ঘটতে পারে যেকোনো কিছুই। কিন্তু লংকান তারকা ওয়েনিন্দু হাসারাঙ্গার পাল্টা আক্রমণে চাপ কাটিয়ে উঠেছে শ্রীলংকা।
আট নম্বরে নেমে ১৬ বলে ১৫ রান করে সফরকারীদের শেষের বিপদ কাটিয়েছেন হাসারাঙ্গা। ৪৭.১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য ২৮৭ রান তুলে ফেলে শ্রীলংকা।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম সমান ৪৯ করে রান খরচ করে নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
এর আগে তাওহিদ হৃদয় দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। আজ আগে ব্যাটিং করতে নেমে আজও বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ। লিটন দাস আজও শূন্য রানে ফিরেছেন। ব্যক্তিগত ৬ রানের মাথায় আউট হতে পারতেন অপর ওপেনার সৌম্য সরকারও। কিন্তু স্লিপে সৌম্যর ক্যাচ নিতে পারেননি লংকান ফিল্ডার।
জীবন পেয়ে সৌম্য আজ রানে ফিরেছেন। শুরুর দিকে বেশ নড়বড়ে লাগলেও সেট হওয়ার পর সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে সৌম্যর ৭৫ বলে ৭২ রানের জুটিটাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে। শান্ত ৩৯ বলে ৬টি চারে ৪০ রান করে ফিরলে এই জুটি ভাঙে।
অনেকদিন পর ফিফটি পাওয়া সৌম্য কিন্তু শেষ পর্যন্ত উইকেট বিলিয়ে দিয়েই ফিরেছেন। দারুণ খেলতে খেলতে হুট করেই লংকান স্পিনার হাসারাঙ্গাকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন সৌম্য। ফিরেছেন ৬৬ বলে ১১টি চার ১টি ছয়ে ৬৮ রান করে।
এরপরের গল্পটা তাওহিদ হৃদয়ের। ইনিংসের ১৩তম ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত ফেরার পর ক্রিজে এসেছিলেন। হৃদয় অপরাজিত ছিলেন ইনিংসের শেষ অবদি। গত কয়েকটা ম্যাচে সেভাবে হাসেনি হৃদয়ের ব্যাট। সেই কারণেই কিনা ইনিংসের শুরুর দিকে রয়েসয়ে খেলেছেন। তারপর খোলস ছেড়ে বেড়িয়েছেন।
ইনিংসের শেষ দিকে রীতিমতো বিধ্বংসী রুপ ধারন করেছিলেন তরুণ ব্যাটার। ইনিংসের শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকানো হৃদয় শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ব্যক্তিগত ৯৬ রানে। মাঝে হৃদয়কে বেশ ভালো সঙ্গই দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম (২৫ বলে ২৫), মেহেদি হাসান মিরাজ (১৮ বলে ১২), তানজিম হাসান সাকিব (৪৪ বলে ১৮) ও তাসকিন আহমেদ (১০ বলে ১৮)।
৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার হয়ে হাসারাঙ্গা ৪৬ রানে চারটি ও দিলশান মাদুশঙ্কা ৩০ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার সিরিজের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি।
The post রোমাঞ্চ শেষে হেরে গেল বাংলাদেশ appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.