একটি বছর ঘুরে আবারো এসেছে পবিত্র রমজান মাস। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য এক রহমত ও বরকতময় মাসের নাম রমজান মাস। রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা, যে রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই মহিমান্বিত মাসে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে পুরো মুসলিম উম্মাহ।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে দেশ-বিদেশের সকল মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মুসলিম শিক্ষার্থীদের মাঝেও সেই পবিত্র মাসের খুশির আমেজ লক্ষণীয়।
মহান আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য রমজানের এক মাস ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পার করতে চায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা-ল্যাব চলমান থাকলে সেই ইবাদত-বন্দেগিতে কিছুটা ভাটা পড়ে। রোজা রেখে দীর্ঘ সময় ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া, পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যেমন কষ্টকর, তেমনি ৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ল্যাব করাটাও কষ্টকর।
এদিকে প্রকৃতির রুক্ষ আচরণ শিক্ষার্থীদের কষ্টকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে। কারণ, বাংলাদেশে এখন বসন্তকাল চললেও প্রকৃতির বিচারে সেটি গ্রীষ্মকাল মনে হয়। প্রচন্ড রোদে একটু হাটলেই হাসফাস অবস্থা হয় সকলের। পাশাপাশি ব্যস্ত সময়সূচিতে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
রসায়ন বিভাগের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মারুফা হাকিম বলেন, আমরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও আমাদের পূর্ববর্তী জেনারেশন থেকে বিবেক, বিচার-বুদ্ধি, মেধা ও মননশীলতায় পিছিয়ে আছি। রমজানে আল্লাহর সন্তষ্টির কথা চিন্তা না করে টানা ক্লাস করতে হয়, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ল্যাব করতে হয়। কেন এ বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়না? রমজানে সেহেরীর পরে সকাল সকাল ক্লাস রাখা হয়। ক্লাস করে বাসায় গিয়ে ক্লান্ত থাকার জন্য সময়মতো নামাজ পড়া হয়না। ইফতারের পরে বিশ্রাম নেওয়ার বদলে নিতে হয় মিড পরীক্ষার প্রিপারেশন। পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এবারও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পবিত্র রমজান উপলক্ষে ৪০ দিনের দীর্ঘ ছুটি দিয়েছে, তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান পিয়াস বলেন, রমজান মাসে রোজা রেখে ক্লাস, পরীক্ষা ও ল্যাবে মনোযোগ দেয়া কষ্টকর। সারাদিন রোজা রেখে ক্লাস-পরিক্ষার পর আবার টিউশনের জন্য সময় বের করতে হয়। দিনে এতটা দৌড়ঝাপ করে ইফতারের পর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। ফলে মিডের পড়ার প্রতি মনোযোগ আসে না। আবার তারাবী নামাজ পড়তে হয়। ১২ টার দিকে ঘুমাতে গেলে সেহরীর জন্য উঠতে হয় ৪ টায়। ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমানোর প্রিপারেশন নিতে নিতে ৬ টা বেজে যায়। আবার ৮ টায় উঠে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়। ফলে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ক্লাস ও ল্যাবে কনসেনট্রেট করতে পারি না। আবার, পড়াশোনার পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় মিড পরিক্ষা খারাপ হয়।
সাভার থেকে আসা ১৪তম আবর্তনের আরেক শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান সিয়াম বলেন, রমজান মাসে রোজা থেকে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো ভার্সিটির বাস ধরা। যেহেতু আমাদের আবাসন সুবিধা নেই, তাই প্রশাসনের উচিত ছিল রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিয়ে ভাবা। সেহরী করে ঘুমানোর সময় পাই না। বাসা থেকে ৬ টায় বের হয়ে সাড়ে ৬ টায় ভার্সিটির বাস ধরতে হয়। আবার ভার্সিটির বাস মিস হয়ে গেলে লোকাল বাসে আসলে ক্লাস ধরতে পারি না। রোজা থেকে যাওয়া আসা নিয়ে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় বাস জার্নি করতে হয়; যা খুবই কষ্টকর। রাস্তায় জ্যামের কারণে অনেক সময় ইফতার করা যায় না। বাসায় ফিরে ইফতার করে পড়াশোনায় কনসেনট্রেট করতে পারি না। ফলে সেশনজট কমানোর চেষ্টা থাকলেও আল্টিমেটলি রেজাল্ট খারাপ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জি. এম. আল-আমীন বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে আছে। কম্পিটিশনের এই যুগে আমাদের শিক্ষার্থীরা দ্রুত গ্রাজুয়েশন শেষ করার চেষ্টা করছে। অন্যান্য বছরে রোজার মধ্যে যেভাবে ক্লাস-পরীক্ষা চলেছে, এবারও সেভাবেই চলবে আমাদের নতুন সময়সূচি অনুযায়ী।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ল্যাব করার বিষয়ে তিনি বলেন, রসায়ন বিভাগ ছাড়া বিজ্ঞান অনুষদের অন্যান্য বিভাগে খুব বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। আমাদের শিক্ষকরা সেভাবেই এডজাস্ট করেন। যে ল্যাবগুলোতে সময় বেশি লাগবে সেগুলো রোজার পরে রাখেন।
তিনি আরও বলেন, করোনার পরবর্তী সময়ে আমরা এখনো রাইট ট্র্যাকে যেতে পারি নি। তাই আমরা এখন চাচ্ছি শিক্ষার্থীরা দ্রুত কারিকুলাম শেষ করুক এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাক।