গাজীপুরে ডুয়েট শিক্ষক নিহতের ঘটনায় মানববন্ধন

গাজীপুরে ডুয়েট শিক্ষক নিহতের ঘটনায় মানববন্ধন

ঘটনাটি গত ২৯ জানুয়ারির। সময় সকাল সাড়ে ১১টা। রাজধানীর মিরপুর থানার দক্ষিণ পীরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা আমির খসরু (৪৬) যাচ্ছিলেন বনানী থানার কামাল আতার্তুক সড়কের কাকলি মোড় দিয়ে। ডিএমপি ট্রাফিকের গুলশান বিভাগের কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বায়েজিদ হোসেন ছিলেন সেখানে দায়িত্বরত। কিছু একটা সন্দেহে মোটরবাইক চালক আমিরকে থামার সংকেত দেন। সার্জেন্টের সংকেতে থামলেন আমির খসরু। সার্জেন্ট তার কাছে গাড়ির কাগজপত্র চেয়ে নিলেন। বললেন, তার সঙ্গে যেতে। বাইকটি সড়কে রেখেই সার্জেন্টের পিছনে যেতে বাধ্য হন আমির। কাছেই পুলিশ বক্স। সেখানে সার্জেন্টের সন্দেহ দূর করে কাগজ হাতে পেতে আমিরের মিনিট পাঁচেক লেগে যায়। দ্রুত কাগজ নিয়ে সড়কে নেমে দেখলেন তার বাইকটি নেই। প্রকাশ্য দিবালোকে হাওয়া হয়ে গেলো একটি মোটরবাইক। সেই সে গেলো এরপর পার হয়ে গেলো ১৬ দিন। রোববার সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলেনি আমির খসরুর মোটরবাইকটির। কেনো এমনটা হলো আর এই ঘটনার জন্য দায় কার?

সেসব প্রশ্ন নিয়ে নানা দেনদরবারেও মেলেনি কোনো উত্তর। পুলিশের কাছে নেই কোনো ক্লু। আমির ও তার পরিবারের কাছে নেই কোনো উত্তর। আছে কেবল হতাশা।

১১০ সিসি মডেলের বাইকটি দামি। বিশেষ করে আমির খসরুর মতো একজন নিম্ন মধ্যবিত্তের কাছে। কিন্তু তদন্তকারীরা গাড়িটি উদ্ধারের আশা দিতে পারছেন না।

তবে এর তদন্ত যতটুকু হচ্ছে তাতে বেরিয়ে এসেছে নানাবিধ তথ্য। নানবিধ প্রশ্ন করে এই প্রতিবেদক জেনেছেন সেসব তথ্য ও ভাষ্য।

প্রথমেই প্রশ্ন- কেনো আমির খসরুকে থামিয়েছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট বায়েজিদ সার্জেন্টের দাবি, আমির খসরু তার বাইকটি রং সাইডে পার্ক করেছিলেন। আমির খসরু অবশ্য সে অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, তার চলন্ত গাড়ি। রাস্তায় থামার কোনো কারণই নেই। তিনি সার্জেন্টের সংকেত পেয়েই বাইক থামান। পুলিক ও বাইকচালকের এই বাহাস সেদিন সহজে মেটেনি। সার্জেন্ট বায়েজিদ তখন মামলাও করতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত করেননি। তাতে অবশ্য ভূমিকা রেখেছেন আমিরের মেয়ে। তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলে সার্জেন্টকে মামলা ঠোকা থেকে ক্ষান্ত করতে সক্ষম হন। কিন্তু সেসব শেষ করে সড়কে বের হয়ে আমির খসরু দেখলেন তার বাইকটিই নেই!

প্রশ্ন ছিলো বাইকটি কি লক করা ছিলো না এ জন্য সার্জেন্ট বায়েজীদ দুষছেন আমির খসরুকে। তিনি বলছেন, তার উচিত ছিলো বাইকটি লক করে যাওয়া। আমির খসরু বলছেন, তিনি বাইক লক করেই সার্জেন্টের সঙ্গে পুলিশ বক্সে যান। তবে লক করা হোক বা না হোক প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের চলাফেরা মধ্যেই বাইকটি চুরি হয়েছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই।

কিভাবে হাওয়া হয়ে গেলো বাইকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ কি দেখা হয়েছে প্রতিবেদক এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে সড়কে বাইকটি দাঁড় করানো ছিলো। কিন্তু একটু পরেই একটি চলন্ত বাসের আড়ালে পড়ে যাওয়ায় বাইকটি দেখা যাচ্ছিলো না। আর বাসটি সরে যেতেই দেখা গেলো বাইকটি আর নেই। অনেকটাই সিনেম্যাটিক! তবে প্রশ্ন ছিলো, কেমন করে হতে পারে এমন ঘটনা পুলিশ বলছে, তাদেরও জানা নেই। তারা তদন্ত করছেন। তবে একটি তথ্য পুলিশ কিংবা অপরাধ বিশ্লেষকদের কাছেই আছে। তা হচ্ছে- রাজধানীতে এমন বাইক চুরির চক্রের সদস্যদের একটি লকড বাইক আনলক করতে ৩০ সেকেন্ড সময়ও লাগে না

এ নিয়ে কথা হচ্ছিলো একজন মোটরবাইক মেকানিকের সঙ্গে। দীর্ঘদিন গাড়ির লক সিস্টেম নিয়ে কাজ করা এই মেকানিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন- বাজারে যত আধুনিক মডেল আছে সেগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো তবে লক ভাঙা সম্ভব। একজন দক্ষ চোর মাস্টার কী (নকল চাবি) দিয়ে সহজেই লক খুলে ফেলতে পারেন। এমন কি চাবি ছাড়াও লক ভাঙা সম্ভব। তাই আমরা চালকদের আলাদা চালা ব্যবহারের পরামর্শ দেই।

চুরির দায় কে নেবে এমন প্রশ্নে আমির খসরু জানালেন, সড়কে নেমে বাইক না পেয়ে তিনি সার্জেন্ট বায়েজীদেরই শরণাপন্ন হলেন। কিন্তু সার্জেন্ট তাকে বললেন, আপনার গাড়ি দেখে রাখার দায়িত্ব তো আমার না।

আমির খসরুর দাবি, সার্জেন্টই তাকে রাস্তায় গাড়ি রাখতে বাধ্য করলেন। অতএব দায়িত্ব তো তাকেই নিতে হবে! আমিরের দাবি সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, তার চলন্ত বাইকটিই থামিয়েছিলেন সার্জেন্ট।

মামলা হয়েছে কি হ্যাঁ আমির খসরু তখনই এই ঘটনায় একটা চুরির মামলা করেন। তবে তার পরে কেটে গেছে ১৫ দিন। কিন্তু গাড়ি উদ্ধারের কোনো আশা দেখছেন না আমির খসরু।

কি দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজে এই সড়কের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, চলন্ত বাইকটি থামার সংকেট দেন সার্জেন্ট বায়েজিদ। থামার পরে সার্জেন্টের পেছনে পেছনে চালক আমিরকে যেতে দেখা যায়। মিনিট পাঁচ পরে একটি লাল রঙের বিআরটিসির দ্বিতল বাস কাকলি মোড় পার হওয়ার পরপরই মোটরসাইকেলটি উধাও হয়ে যায়। বিআরটিসির বাসের কারণে কে কি ভাবে মোটরসাইকেলটি নিয়েছে সেটি দেখা যায় নি।

বনানী কাকলী সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা জানার চেষ্টা করেও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে জানা গেছে মোড়ে মোড়েই সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে।

মামলার তদন্তে কতগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়েছে জানতে চাইলেও তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুবায়দুল ইসলাম সঠিক সংখ্যা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট বায়েজিদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিষয়টি দুঃখ জনক। আমরা গাড়িটি উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। থানা পুলিশও কাজ করছে।

ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়িটি রং রাস্তায় পাকিং করায় আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাগজ নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে চালকের মেয়ের অনুরোধে কাগজ ফেরত দেই। পরে তিনি বের হয়ে দেখেন তার গাড়িটি নেই। এই ঘটনায় আমি নিজে থেকে তাকে দিয়ে গাড়ি চুরির মামলা করিয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি।

গাড়ির কাগজ নেওয়ার পর গাড়ির দায়িত্ব ট্রাফিকের কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বায়েজিদ বলেন, গাড়ির কাগজ নেওয়ার পর আমি তাকে বলেছিলাম গাড়ি লক করে আসেন। অথবা গাড়ির কাছে থাকেন। কিন্তু সার্জেন্ট ধরায় ঘাবড়ে গিয়ে হয়তো সেটি করেন নি। এই দায় তো আমাদের না। তবে যা ঘটেছে সেটি দুঃখজনক।

তদন্ত কতদূর মামলাটি তদন্তের ভার পড়েছে বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুবায়দুল ইসলামের উপর। তবে দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তিনি ছুটিতে যান। ফলে তদন্তের অগ্রগতি নেই কিংবা থাকলেও তা নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। এখনো বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।

এ দিকে ট্রাফিক বিভাগের গুলশান বিভাগের কর্মকর্তারা সার্জেন্ট গাড়ির কাগজ পরীক্ষা বা মামলা দেওয়ার সময় আটক করলে দায়ভার নিতে নারাজ। এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এ এস এম আফিজুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। আসলে এখানে দায়ভারের বিষয়টি আসছে না। মামলা যেহেতু হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে যদি কারো গাফলতি বা অপেশাদারিত্ব কিছু থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিবে।

Scroll to Top