ফেনীতে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেল এসএসসি পরীক্ষার্থী

ফেনীতে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেল এসএসসি পরীক্ষার্থী

বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্তে সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান সংঘাতে সৃষ্ট উত্তেজনা ও ঘটনা প্রবাহে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কড়া সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিএনপি নেতারা।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত এক মানববন্ধনে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কী কারণে বিজিবি রেখেছেন? কী কারণে বিজিবির জন্য অস্ত্র দেওয়া হয়? কেন লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে অস্ত্র কিনি? কেন এত গোলাবারুদ কিনি? কেন এত আধুনিক অস্ত্র কিনি?’

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি এসেছে।

গয়েশ্বর চন্দ্রের তথা বিএনপির এই বক্তব্যকে সীমান্তে যুদ্ধবস্থা সৃষ্টির উষ্কানি হিসেবে দেখছেন অনেকেই। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন’ ও ‘অর্বাচীন মন্তব্য’ হিসেবে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেছেন নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপি’র এই ধরনের মন্তব্যকে ‘জ্ঞানের স্বল্পতা’ বলে বর্ণনা করেছেন তারা।

বিএনপি মনে করছে, এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না। তাদেরকে ক্ষমতায় রাখলে দেশটি নিরাপদ থাকবে না। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য রাখেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সেখানেও তিনি এই ঘটনার অন্তরালে কী আছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।

গয়েশ্বর বলেন, ‘একদিকে ভারত সীমান্তে ক্রমাগত গুলিবর্ষণ করে আমাদের বিজিবি সদস্য ও জনগণকে হত্যা করা হচ্ছে। আবার পূর্বদিকে মিয়ানমারের গুলিতে এ পর্যন্ত আমাদের দেশে কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন। ঝাঁকে ঝাঁকে সেখান থেকে লোকজন পলায়ন করে এখানে আশ্রয় নিচ্ছে। যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের সঙ্গে সরকারের গোপন সম্পর্ক আছে কী না?’

তিনি আরও বলেন, ‘বার্মার (মিয়ানমার) মতো দেশ বাংলাদেশে গুলি ছোঁড়ে। এই শক্তি, সাহস ইতিপূর্বে কোনো দিন পায়নি, আজকে কেন পায়? সবাই ভাবেন, দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে।’

যেভাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা

মিয়ানমার অভ্যন্তরে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের সঙ্গে দেশটির জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান সংঘাতের আঁচ বাংলাদেশ সীমান্ত যখন ক্রমেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছে তখন দেশের রাজনৈতিক নেতাদের এ নিয়ে দায়িত্বহীন বক্তব্য সংকটকে আরও উসকে দেওয়ার শামিল বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুর রশীদ মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে বিএনপি নেতাদের সরকারের সমালোচনায় সরব হওয়াকে ‘জ্ঞানের স্বল্পতা’ বলে বর্ণনা করেছেন। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর কখনোই দায়িত্ববান মন্তব্য দেখিনি। তাদের মাথায় কাজ করে অভ্যন্তরীন রাজনীতি।’ 

‘যারা দেশ পরিচালনা করছেন সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের। স্বভাবতই সরকারের সাফল্য তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ই হতে পারে। তাদের (বিএনপি’র) পরামর্শটি দেখতে হবে যে তারা কি সরকারের সাফল্য নষ্ট করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন নাকি সত্যি সত্যি জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে পরামর্শ দিচ্ছেন-সেই বিষয়টা বিবেচনায় রাখা উচিত’-যোগ করেন আব্দুর রশীদ।

ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু আর অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বক্তব্যকে বিএনপি নেতারা গুলিয়ে ফেলেছেন উল্লেখ করে এই সামরিক বিশ্লেষক বলেন, ‘যখন আমাদের দেশের এ রকম সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যা তৈরী হয়েছে, সেখানে অর্বাচীন মন্তব্য মানে তো সবকিছু মিলিয়ে এই ভূরাজনীতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা। তারা তাদের স্বল্প জ্ঞানকে রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত করে ফেলছেন।’

ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মনে করি সীমান্ত প্রশ্নে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপই নিচ্ছে। এই ইতিবাচক যে ব্যবস্থা সেটা যদি কার্যকর না হয় তখন সরকার তার ব্যবস্থা নেবেন; যদি বিরোধিতা বা সমালোচনার কথা বলা হয় তখন সেটা গ্রহণযোগ্য হবে। এখন সরকার যে বিষয়টি দেখছে তা নিয়ে নেতিবাচক কথা বলার কোন অবকাশ নেই।’

‘কী কারণে বিজিবির জন্য অস্ত্র দেওয়া হয়?’- মিয়ানমার ইস্যুতে দলটির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এরূপ বক্তব্য বাংলাদেশের জাতীয় নিরপত্তার প্রশ্নে কতখানি যথার্থ জানতে চাইলে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে অলরেডি স্টেটমেন্ট করা হয়েছে। কিছু বলা লাগলে আমরা আলোচনা করে বলব।’

Scroll to Top