লাইফস্টাইল ডেস্ক
শীত ও গরমে প্রতিদিন গোসল করা অধিকাংশেরেই অভ্যাস। তবে জানেন কি, প্রতিদিন গোসলের সময় নিজের অজান্তেই ত্বকের ক্ষতি করছি আমরা। সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার গোসল করলেই আপনি থাকবেন সুস্থ। প্রতিদিন গোসল করার প্রয়োজনীয়তা নেই- এমনই মত বিশেষজ্ঞদের।
তবে আপনি যখনই ঘামবেন; তখনই গোসল করা জরুরি। গোসলের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি শুষ্কতা, চুলকানিসহ ত্বকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। এমনকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে গোসলের মাধ্যমে।
প্রতিদিন গোসল করার ভুল ধারণার মতো আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আছে, যেগুলো অনেকেই এড়িয়ে যান। সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য এড়াতে হবে সেই ভুলগুলো। আসুন দেখে নেই গোসলের সময় কোন কাজগুলো করা যাবে না।
গরম পানি দিয়ে গোসল
গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আরাম লাগলেও এটি আমাদের ত্বক শুষ্ক করে দেয়। কারণ, গরম পানি আমাদের ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলে। এতে আমাদের ত্বকে পানির পরিমাণ কমে যায়।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শুধু গরম পানি দিয়ে গোসল করা বন্ধ করলেই চলবে না, দীর্ঘসময় ধরে গোসল করা যাবে না। ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা ধরে রাখে। সাধারণভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিটের গোসল ঠিক আছে। আর যদি শ্যাম্পু করেন সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট।
ত্বকের আদ্রতা কমে গেলে র্যাশ বা চুলকানির মত সমস্যা দেখা দেয়। কারণ শুষ্ক ত্বক সহজেই ফেটে যায় আর এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করে।
পরিষ্কারক দ্রব্যের ভুল ব্যবহার
হাতে সময় না থাকলে আমরা অনেকসময় চুলে কন্ডিশনার মেখে গায়ে সাবান মাখি। পরে কন্ডিশনার ধোঁয়ার সময় গায়ে কিছু কন্ডিশনার থেকে যায় যার ফলে বুকে, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্রণ দেখা দিতে পারে। এর কারণ, কন্ডিশনার আমাদের ত্বকে একধরণের প্রলেপ ফেলে যা রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। এর থেকে রক্ষা পেতে আগে কন্ডিশনার ধুয়ে তারপর গায়ে শাওয়ার জেল বা সাবান দিন।
আবার মেয়েদের জন্য নিম্নাঙ্গ, বাহুমূল ও পায়ে সাবান দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারণ, শরীরের এই অংশগুলো সবচেয়ে কম তেলতেলে হয়। এতে অতিরিক্ত বা ক্ষারযুক্ত সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করলে এসব জায়গা আরও সুষ্ক হয়ে যায়। এছাড়াও চেষ্টা করুন ঘ্রাণবিহীন প্রসাধন ব্যবহার করতে।
গোসলের সময় ক্লেনজিং মাস্ক নয়
অনেকেই ভাবেন যে ভেজা ত্বকে পরিষ্কার করে এমন ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে সেটি ত্বকের জন্য উপকারী। কিন্তু ইতোমধ্যে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের আদ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। পরে ক্লেনজিং মাস্কের ব্যবহার ত্বক থেকে আরও আদ্রতা শুষে নেয়। কিন্তু ক্লে, মাড ও চারকোল মাস্ক ত্বক থেকে বিষাক্ত পদার্থ শুষে নেয় ও ত্বককে আর্দ্র রাখতে ভূমিকা রাখে। তাই কোন মাস্ক ব্যবহারের পর বা মাস্ক ব্যবহার না করলেও গোসলের সময় ঘন করে মধুর একটি স্তর মেখে মিনিট পাঁচেক রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি এটি ত্বককে স্বাস্থ্যজ্জ্বল দেখাবে।
গোসলের শুরুতে শেভ করা
অনেকেই গোসলের আগে শেভ করেন। কিন্তু শুকনো ত্বকে শেভ করার চেয়ে ভেজা ত্বকে শেভ করা অনেক ভালো। গোসল শুরু করার দশ মিনিট বাদে শেভ করুন। এতে আমাদের রোমকূপের গোড়া নরম হয়। ফলে শেভ করা সহজ ও আরামদায়ক হয়।
পুরনো স্পঞ্জ ব্যবহার করবেন না
কিছু জিনিস ফেলে দেওয়ার ব্যপারে আমরা বেস আলসেমি করি। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লোফা ও স্পঞ্জ। কিন্তু এগুলো বেশিদিন ব্যবহার করা উচিৎ না কারণ এতে সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু জমে থাকে। প্রতিবার ব্যবহারের পর এগুলো ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে রাখুন। ভেজা জায়গায় রাখলে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গোসলের পরপরই ময়েশ্চারাইজার নয়
গোসলের পর ঘষে ঘষে ত্বক না মুছে তোয়ালে বা গামছা দিয়ে হালকা করে চেপে চেপে মুছুন। পুরোপুরি না শুকিয়ে শুধুমাত্র অতিরিক্ত পানি শুষে নিলেই চলবে। এক্সপার্টদের মতে গোসলের তিন থেকে পাঁচ মিনিট বাদে ময়েশ্চারাইজার মাখা ত্বকের জন্য ভালো। ময়েশ্চারাইজার এবং তেল শরীরের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। তাই গোসলের পরপরই না মেখে ত্বকে কিছুক্ষণ পানি ধরে রাখার সময় দিয়ে ময়েশ্চারাইজার মাখলে ত্বক দীর্ঘক্ষণ উজ্জ্বল ও আদ্র থাকবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই