ফিচার ডেস্ক
এইবার গ্রীষ্ম যেন হাজির হয়েছে প্রকৃতির রুদ্ররূপের বারতা নিয়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। গ্রীষ্মের চরম গরম চারদিকে। বাইরে বেরুলে রোদে যেন গা পুড়ে যায়। গরমে ঘাম হয়, বাড়ে অস্বস্তি।সঙ্গে হাজির গরমের নানা অসুখও। আছে গরমের আরেক আতঙ্ক হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিও। এই গ্রীষ্মেই সাধারণত হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে। প্রচন্ড গরমে কিছু কিছু মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। ইতোমধ্যে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ৪ নির্দেশনা জারি করেছে।
তবে চিকিৎসকদের মতে হিট স্ট্রোকের কারণ ও প্রতিকারের উপায় জানা থাকলে হিট স্ট্রোক এড়িয়ে থাকা যায়। হিট স্ট্রোক এর কারণ, লক্ষণ ও রক্ষার উপায় বিষয়ে সারাবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা।
হিট স্ট্রোকের কারণ
হিট স্ট্রোক এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া। হাইপার হচ্ছে অধিক মাত্রা, আর থার্মিয়া মানে তাপ। শরীরে অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই বলা হয় হিট স্ট্রোক। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রির বেশি হয়ে গেলে মানুষের রক্তচাপ কমে যায়, এমনকি অচেতনও হয়ে পড়তে পারে। এ সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘হিট স্ট্রোক’ বলে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আমাদের শরীরের ভেতরে নানা রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে। ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু একটানা রোদে থাকলে গরমে ঘামের সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়। ঘামের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যাওয়াতে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে শরীরকে করে তোলে অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত।
হিট স্ট্রোক কাদের হয়?
এই গরমে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন অনেকেই। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যুও হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বৃদ্ধ ও শিশুদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণক্ষমতা কম থাকে তাই তারা হিট স্ট্রোকে সহজেই আক্রান্ত হয়। এছাড়া যারা প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় শারীরিক পরিশ্রম করেন এবং প্রস্রাব বেশি হওয়া অথবা মানসিক রোগের ওষুধ নিয়মিত সেবন করেন তাদেরও আক্রান্তের হার বেশি।
হিট স্ট্রোকের প্রতিকার কী?
যতটুকু সম্ভব এই প্রচণ্ড গরমে রোদে এড়িয়ে চলা ভালো। একান্তই বের হতে হলে সঙ্গে পানির বোতল রাখা দরকার ও মাঝে মাঝে পানি পান করা উচিত। তা না হলে শরীর অবসন্ন মনে হওয়া মাত্রই ছায়াযুক্ত বা শীতল কোনো স্থানে বিশ্রাম করতে হবে।
যদি অবস্থা খারাপ মনে হয় তাহলে দ্রুত রোগীকে অপেক্ষাকৃত শীতল কোনো স্থানে নিয়ে যেতে হবে। ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় শরীর মুছে নিতে হবে। খাবার স্যালাইন খেতে হবে, যাতে শরীরের লবণ ও পানিশূন্যতা দূর হয়। অজ্ঞান হয়ে গেলে বা মাথা ঘোরালে মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করতে হবে। কাঁধে-বগলে অথবা কুঁচকিতে বরফ দিতে হবে। তাতেও অবস্থার উন্নতি না হলে, আক্রান্তকে কাছের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
গরমের দিনে কিছু নিয়ম মেনে চললে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচা যায়। রোদে দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি অনুচিত। ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, হালকা রঙের সুতির কাপড় হলে ভালো। এতে প্রচণ্ড গরম থেকে রক্ষা মেলে। যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। রোদে বাইরে যাওয়ার সময় টুপি, ক্যাপ অথবা ছাতার ব্যবহার গরম কম লাগে। প্রচুর পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন অথবা ফলের রস পান করতে হবে। গরমে রোদে তীব্র শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলা উচিত।
একটু সচেতন হলেই হিট স্ট্রোক এড়িয়ে থাকা যায়। তবে যদি নেহায়েতই কেউ আক্রান্ত হয়- ঘাবড়াবার কারণ নেই। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও হাসপাতালে ভর্তি করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া গেলে বেশির ভাগ হিট স্ট্রোকের রোগীই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।
সারাবাংলা/এসবিডিই