স্পোর্টস ডেস্ক
প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে ফলো-অনে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে তাদের ফলো-অন না করিয়ে চা বিরতির পর আবার ব্যাটিংয়ে নেমেছিল শ্রীলংকা। লংকানদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা অবশ্য একদমই ভালো হয়নি। হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরেও অবশ্য বিশাল লিডের দিকে এগুচ্ছে শ্রীলংকা। তৃতীয় দিনশেষে লংকানদের স্কোর ৬ উইকেটে ১০২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের লিড দাঁড়িয়েছে ৪৫৫ রান।
চা বিরতির পর ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলংকা। ৪ রান করা দিমুথ করুনারত্নেকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন হাসান। পরের ওভারেই কুশল মেন্ডিসকে ফেরান খালেদ আহমেদ। ২ রান করা মেন্ডিসকেও বোল্ড করেছেন খালেদ। ১৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল লংকানরা।
নিশান মাদুশকা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের জুটিতে থিতু হয় লংকানদের ইনিংসে। লিডও পেরিয়েছে ৪০০ রান। ৪৫ রানের এই জুটি ভাঙে মাদুশকা ফিরলে। মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে হাসানের দ্বিতীয় শিকার হন ৩৪ রান করা মাদুশকা। এরপর ক্রিজে নামা দীনেশ চান্ডিমাল ও আগের ম্যাচের নায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেও ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদই। ৯ রানে ফিরেছেন চান্ডিমাল, ডি সিলভা করতে পেরেছেন মাত্র ১ রান। ৭৮ রানে লংকানদের ৫ উইকেট নিলেও লিড ততক্ষণে ছাড়িয়ে গেছে ৪৩০ রান।
পুরো সিরিজজুড়ে দারুণ ব্যাটিং করা কামিন্দু মেন্ডিসও আজ বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। ৯ রানের মাথায় খালেদকে ড্রাইভ করতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। দিনের বাকি সময় আর বিপদ হতে দেননি ম্যাথিউস ও জয়সুরিয়া। ম্যাথিউস অপরাজিত আছেন ৩৯ রানে, জয়সুরিয়া করেছেন ৩ রান।
দ্বিতীয় সেশনে লংকান বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং ও ব্যাটারদের দায়িত্বহীন শটে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে ফলো-অনে পড়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে না পাঠিয়ে নিজেইরা ব্যাটিং করবে শ্রীলংকা। প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছে লংকানরা।
লাঞ্চের পরপর দুর্দান্ত বোলিং করেছেন আসিথা ফার্নান্দো। এক ওভারেই সাকিব-লিটনকে ফিরিয়েছেন তিনি। ৪৫ তম ওভারের শুরুতেই সাকিবকে ফিরিয়ে প্রথম ধাক্কা দিয়েছেন আসিথা। ১৫ রান করা সাকিবকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেছেন। রিভিউতেও আম্পায়ার্স কলে কপাল পুড়েছে সাকিবের। লিটন দাস টিকতে পেরেছেন মাত্র তিন বল। আসিথার বলে খোঁচা দিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন ৪ রান করা লিটন।
লিটন ফেরার পর মুমিনুল-শাহাদাত জুটি কিছুটা থিতু হওয়ার চেষ্টায় ছিল। এই জুটিও বেশি বড় হতে পারেনি। ১৮ রানের জুটি ভাঙ্গে কুমারার বলে শাহাদাত ফিরলে। ৮ রানে শাহাদাত কামিন্দু মেন্ডিসের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হলে ১৪৮ রানেই ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শাহাদাত ফেরার পর কিছুটা প্রতিরোধের আভাস দিয়েছিলেন মুমিনুল-মিরাজ। প্রায় ১০ ওভার ক্রিজে টিকে ছিলেন দুই ব্যাটার। তবে ১৭ রানের জুটি ভাঙ্গে চা বিরতির ঠিক আগে। জয়সুরিয়ার বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মিরাজ। ৩১ বলে ৭ রান করা মিরাজ ফিরলে অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সতীর্থদের যাওয়া আসার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মুমিনুল। ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাটিং করে টেস্টে ৪০০০ রান পূর্ণ করেছেন এই ব্যাটার। চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁলেন মুমিনুল। চা বিরতির ঠিক আগে আউট হয়েছে মুমিনুলও। ৩৩ রান করা মুমিনুলকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেছেন ফার্নান্দো। শেষ উইকেট হিসেবে খালেদকে ১ রানে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন ৪ উইকেট নেওয়া আসিথ। বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৭৮ রানে।
দিনের শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন জাকির-তাইজুল জুটি। প্রথম ঘণ্টায় কিছু হাফ চান্স ছাড়া তেমন কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি শ্রীলংকা। লংকান বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে এই জুটি। এর মাঝেই ফিফটি তুলে নেন দারুণ ব্যাটিং করা জাকির। জাকির-তাইজুল জুটিতে লাঞ্চ পর্যন্ত নিশ্চিন্তেই পার করে দেবেন বাংলাদেশ, এমনটাই মনে হচ্ছিল।
তবে সেশনের শেষ ৪৫ মিনিটে এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। ৪৯ রানের জুটি আরও বড় হওয়ার আগেই প্রথম আঘাত হানেন বিশ্ব ফার্নান্দো। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পরপরই ফার্নান্দোর বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন জাকির। ফেরার আগে করেছেন ৫৪ রান, মেরেছেন ৮টি চার। জাকির ফেরার পর ক্রিজে নেমে অল্প সময় টিকতে পেরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১১ বল খেলে মাত্র ১ রান করা শান্ত ফিরেছেন প্রবথ জয়সুরিয়ার বলে করুনারত্নের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
পরের ওভারে আবার ফার্নান্দোর আঘাত। এবার নাইট ওয়াচম্যান তাইজুল হয়েছে বোল্ড। ২২ রান করা তাইজুল ফিরলে মাত্র ৯ রানের মাঝেই ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। তিন ব্যাটারের দ্রুত ফেরার পর বাকি সময়টা আর বিপদ হতে দেননি মুমিনুল হক ও সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার সিরিজের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলবিডি।
সারাবাংলা/এফএম