জেরুজালেম, ১২ ডিসেম্বর – গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর মধ্যেই গত ২৮ অক্টোবর অবরুদ্ধ ওই উপত্যকায় স্থল হামলাও শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধে এরই মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী-শিশু।
৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে সেখানে নজিরবিহীন অভিযান চালায়। তাতে ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। আহত হয় কয়েক হাজার। সেদিন ২৪০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস যোদ্ধারা। মূলত ইসরায়েলের অত্যাচার, নির্যাতন, দখলদারির প্রতিবাদেই ওই দিন হামলা চালায় হামাস।
হামাসের হামলায় হতভম্ব হয়ে যায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধ ঘোষণা করে তারাও বোমা হামলা শুরু করে। তাদের বক্তব্য, এই যুদ্ধে হামাসকে সমূলে নির্মূল করা হবে। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক সমাধানই এই সংঘাত শেষ করার একমাত্র উপায়। কিন্তু ইসরায়েলের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু থেকে শুরু করে সরকারের প্রায় সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য হামাস নেতাদের নির্মূল করা।
সম্প্রতি নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাস নেতারা যদি আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে তাদের প্রাণভিক্ষা দেওয়া হবে। ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও বারবার একটি স্লোগান দেখাচ্ছে—‘টুগেদার উই উইন’ অর্থাৎ, আমরা একসঙ্গে লড়ে জিতব। কিন্তু সত্যিই কি এই বিজয় সম্ভব? বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ মনে করছেন- না।
প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ বসবাস করেন এই গাজা উপত্যকায়। ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। বহু হামাস নেতারও মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এইভাবে হামাসকে খতম করা সম্ভব নয়। কারণ, হামাস কেবলমাত্র একটি সংগঠন নয়।
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের বিশেষজ্ঞ গুইডো স্টেইনবার্গের বক্তব্য, গাজা উপত্যকায় অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার হামাস যোদ্ধা আছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, গাজা উপত্যকার মানুষ হামাসকে সমর্থন করে। তাদের কাছে হামাস একটি সামাজিক সংগঠন। যারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা পরিচালনা করছে হামাস। দাওয়াহ বলে তাদের একটি সামাজিক সংগঠন আছে। এই দাওয়াহ-তে কাজ করে অন্তত ৮০ থেকে ৯০ হাজার মানুষ। তারা যোদ্ধা নন, স্বেচ্ছাসেবী।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব স্টাডিসের অধ্যাপক রশিদ খালিদি জানিয়েছেন, “ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে, এর ফলে সেখানে হামাস নেতাদের মারা সম্ভব। কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতাদর্শকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।”
খালিদির বক্তব্য, অভিযান চালিয়ে হামাসের নেতাদের ইসরায়েল খতম করতে পারে। কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানকে ধ্বংস করতে পারবে না। ফলে রাজনৈতিক সমাধানই এই সংঘাত শেষ করার একমাত্র উপায়।
সূত্র: বিডি প্রতিদিন
আইএ/ ১২ ডিসেম্বর ২০২৩