হজযাত্রা ৯ মে, বাড়িভাড়া নিশ্চিত করতে পারেনি বেসরকারি এজেন্সি

হজযাত্রা ৯ মে, বাড়িভাড়া নিশ্চিত করতে পারেনি বেসরকারি এজেন্সি

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী ৮ মে হজযাত্রার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরাবরের মতো রাজধানীর আশকোনা হজ অফিসে এ কার্যক্রমের উদ্বোধনের একদিন পর অর্থাৎ ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। সে জন্য হজযাত্রার যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করা থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পিছিয়ে বেসরকারিখাত।

সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে তাদের বাড়ি ভাড়া করা হয়নি। এর পেছনে সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন তারা। তারা বলছেন, সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য হজ এজেন্সিগুলোতে ভিসা সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, হজ এজেন্সি থেকে ভিসার জন্য কোনো সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। সরকারি-বেসরকারি খাতের কর্মকর্তাদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে প্রায় ৮০ হাজার যাত্রী হজে যাওয়া অনিশ্চিতার মধ্যে রয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ১৭৪ জন। এরমধ্যে সরকারিভাবে ৪ হাজার ২৭৯ জন এবং বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন। যদিও বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রী পাঠানোর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় কয়েকদফা নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও তেমন সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৮৩ হাজার ১৭৪ জনের নিবন্ধন চূড়ান্ত করা হয়।

তথ্যানুযায়ী এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

এর আগের বছর ২০২৩ সালে সরকারিভাবে হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছিল ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সরকারি- বেসরকারি দুই পর্যায়েই প্রায় ৯০ হাজার টাকা ব্যয় কমানো হয়েছে। তারপরেও হজ নিবন্ধনে কোটা পূরণ করা যায়নি।

এই পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই আগামী ৯ মে প্রথম হজ ফ্লাইট যাচ্ছে। তার আগে ৮ মে আশকোনা হজ অফিসে ২০২৪ সালের হজযাত্রার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ধর্মমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. সাদিকুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হজযাত্রার সব প্রস্তুতি শেষ প্রায়। এরই মধ্যে সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে।’

হজযাত্রা উদ্বোধনের প্রস্তুতি চললেও এদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যে ৭৮ হাজার ৮৯৬ হাজার যাত্রী সৌদি আরবে হজ পালন করতে যাবেন তাদের প্রস্তুতি এখনও শেষ হয়নি।

জানা গেছে, তাদের থাকার জন্য সৌদি আরবে এখনও বাড়ি ভাড়া ঠিক করা হয়নি। বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা না পাওয়ায় এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- হাব এর সভাপতি শাহাদত হোসাইন তসলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া করতে হলে সৌদি আরবে তো যেতে হবে। কিন্তু সেটি আমরা যেতে পারিনি। কারণ যেতে হলে ভিসার দরকার আর সেখানে সহযোগিতা করবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।’

তিনি বলেন, ‘এবার হজ ব্যবস্থাপনায় কিছুটা পরিবর্তন আসছে। সে জন্য আমাদের আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। সে জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে তিন মাস আগেই বলেছি। এখন যে সমস্যাটা তৈরি হয়েছে সেটা হলো আমাদের সৌদি আরব যেতে ভিসার ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু তা তারা করেনি। এ দায়িত্ব কিন্তু বিগত বছরগুলোতে করে আসছে। আমরা এবারও ভিসার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছি কিন্তু কোনো খবর নেই। এখন দেখুন হজযাত্রা উদ্বোধনের সময় চলে আসছে এখন তারা বলে ভিসা করা সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি কীভাবে যাব আমরা। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো আমরা যেন ওমরাহ ভিসায় যেতে বলে। এদিকে ওমরাহ ভিসা বন্ধ। আবার বলে বিজনেস ভিসায় যেতে। হজের ক্ষেত্রে এটি কী করে সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় যে চার হাজার যাত্রী যাবেন তাদের দেখভালের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এই প্রায় ৮০ হাজার যাত্রীর কী হবে?’

তিনি বলেন, ‘বাড়ি ভাড়ার জন্য আমরা টাকা দিয়েছি। সেখানেও সরকারের কর্মকর্তারা টাকা পৌঁছায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সব বিষয় নিয়ে অনেক আগে থেকে আমাদের পক্ষ থেকে চিঠি চালাচালি করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এতকিছুর পরেও আশা করছি এই জটিলতা কাটিয়ে যথাসময়ে হাজিদের সৌদি আরবে পাঠাতে পারব।’

হাব মহাসচিবের এ অভিযোগের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকরা এ বিষয়ে কালক্ষেপণ করেছেন। তারা শেষ মুহূর্তে এসে এ সব প্রসেসের কথা বলছেন। আমরা তো সহযোগিতা করতে চাই। এটি আমাদের কাজ।’

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৪ সালের ১৬ জুন হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/একে

Scroll to Top