স্মার্টফোন ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছেন ইউরোপের তরুণরা

স্মার্টফোন ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছেন ইউরোপের তরুণরা

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

ইউরোপজুড়ে স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক ব্রিটিশ জরিপ বলছে, প্রায় অর্ধেক তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক এখন ইন্টারনেট ছাড়া সময় কাটাতে বেশি আগ্রহী। প্রযুক্তিনির্ভরতা কমাতে এবং বাস্তব জীবনের সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক সংগঠন ও উদ্যোগ।

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক একটি স্টার্টআপ ‘দ্য অফলাইন ক্লাব’ ঠিক এমনই এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তারা স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ নিষিদ্ধ করে অফলাইন মিটআপ আয়োজন করছে। প্রতিষ্ঠাতারা ইলিয়া নেপেলহাউট, জর্ডি ভ্যান বেনেকম ও ভ্যালেন্টিজন ক্লক এ প্রকল্পের মাধ্যমে “বাস্তব-বিশ্বের সম্প্রদায় এবং খাঁটি, অফলাইন অভিজ্ঞতা” তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন।

তাদের স্লোগান ‘স্ক্রিন টাইমের সাথে রিয়েল টাইম অদলবদল করুন’। অফলাইন ক্লাবের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ইতোমধ্যেই ফলোয়ারের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার।

গত এক বছরে আমস্টারডাম থেকে শুরু করে লন্ডন, প্যারিস, মিলান, কোপেনহেগেন ও বার্লিনে আয়োজন করা হয়েছে এমন বহু ইভেন্ট। অংশগ্রহণকারীরা ফোনের বদলে সময় কাটান বই পড়ে, গেম খেলে, শিল্পচর্চা করে কিংবা স্রেফ বিশ্রাম নিয়ে। ‘ডিজিটাল ডিটক্স রিট্রিটস’ নামে পরিচিত এসব কর্মশালা কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

এই প্রবণতা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। ইউরোপের অনেক রেস্তোরাঁ ও ক্লাব এখন অতিথিদের অনুরোধ করছে যেন তারা মোবাইল ফোন বাসায় রেখেই আসেন।

ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডস ইনস্টিটিউশনেরএক জরিপ বলছে, ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সী ৭০% তরুণ মনে করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটালে তারা খারাপ বোধ করেন। অর্ধেকের মতো তরুণ রাত ১০টার পর নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহারে কারফিউ জারির পক্ষে। এমনকি ৪৬% বলেছে, তারা ইন্টারনেটবিহীন পৃথিবীতে বড় হতে চাইত।

অন্যদিকে, জার্মান প্রযুক্তি সংস্থা বিটকমের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণরা প্রতিদিন গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় স্মার্টফোনে ব্যয় করে—যা সব বয়সের মধ্যে সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের বয়সসীমা বাড়ানো ও স্কুলে স্মার্টফোন নিষেধাজ্ঞা জারির মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তিমন্ত্রী পিটার কাইলও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাধ্যতামূলক কারফিউয়ের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার যে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা বিভিন্ন গবেষণাতেও উঠে এসেছে। চলতি বছরের শুরুতে বিএমসি মেডিসিন জার্নালের এক গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র তিন সপ্তাহ স্মার্টফোন ব্যবহারে কাটছাঁট করলে হতাশার লক্ষণ ২৭% পর্যন্ত কমে যায়।

Scroll to Top