বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ থেকে স্বৈরাচার চলে গেলেও একটি ‘অদৃশ্য শক্তি’ ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন ‘কেউ যেন দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর দলীয় সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে।’
আজ শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জে বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এসব সংস্কার বা দেশ কিভাবে চলবে, তার সব প্রস্তাবনা বিএনপি ৩১ দফা কর্মসূচিতে অনেক আগেই দিয়ে রেখেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবনাগুলোর ৯৫ ভাগই আমাদের দলের ৩১ দফায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার, নারী অধিকার, শিক্ষা-চিকিৎসার অধিকার এবং কৃষক ও শ্রমিকের নিশ্চিত করতে হলে জনগণের রায়ের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
আগামী নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের করণীয় প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে ৩১ দফার ভিত্তিতে আমাদের জনরায় নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য ধানের শীষের প্রতিটি কর্মী, জাতীয়তাবাদের প্রতিটি সমর্থককে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই মহান সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সাবধান করে দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এক বছর আগে আমি অদৃশ্য শক্তির কথা বলেছিলাম, আজ তা দৃশ্যমান হচ্ছে। স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও অদৃশ অপশক্তি মাথা তুলছে মাঝে মাঝে। তা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু আমরা উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি করি। শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আদর্শ লালন করি। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। আমরা যদি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ইস্পাতের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, জনগণের কাছে যেতে পারি তাহলেই নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে সফল জনরায় আনতে পারব।’
বক্তব্যের শেষে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে, বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে না পারে। দলের ভেতরে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সেদিকে সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। জনগণের পাশে থেকে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনসেবার মনোভাব সবাইকে রাখতে হবে। তবেই জনরায় আমাদের পক্ষে আসবে।’
সর্বশেষে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের দুটি বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করতে বলেন। একটি হলো দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকা। আরেকটি হলো দলের নামে কেউ যেন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে, দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে না পারে। তখন তার দুটি প্রতিজ্ঞার প্রতি উপস্থিত নেতাকর্মীরা দু-হাত তুলে সমর্থন জানান।
এরআগে দুপুরে শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আল মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ ও সদস্য লায়লা বেগম, শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল। সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম। সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম।
দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে আরেক সম্মেলন হয়েছিল বিএনপির। আয়োজকেরা জানান, ১৩টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা মিলিয়ে জেলা বিএনপির মোট ২১টি ইউনিটের ২ হাজার ৯০ জন কাউন্সিলর সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দেবেন।