স্থাপত্য নকশায় পুরস্কার পেল এইজ এন্ড এজ আর্কিটেকচার স্টুডিও – আনন্দ আলো

স্থাপত্য নকশায় পুরস্কার পেল এইজ এন্ড এজ আর্কিটেকচার স্টুডিও – আনন্দ আলো

সম্প্রতি স্থপতি ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন যৌথ ভাবে জব – বহারংরড়হরহম অহফধৎশরষষধ ংযধযর লধসব সড়ংয়ঁব শিরোনামে একটি স্থাপত্য নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে এইজ এন্ড এজ আর্কিটেকচার স্টুডিও। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের নকশা করার জন্য এ পুরস্কার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার স্থপতি সাদিকুল বাশার ও স্থপতি সাবরিনা আফতাব এই মসজিদের নকশা করেছেন। সাথে ছিল তাদের টিম। এর আগেও জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশ নিয়ে তারা পুরস্কৃত হয়েছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমি তে বিজয়ী প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন এই স্থপতিদ্বয়। লিখেছেন – মোহাম্মদ তারেক

আমরা চাই, স্থাপত্যচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে। দালান তৈরি না বরং প্রকৃত স্থাপত্যচর্চা হোক। স্থাপত্য ধারণ করুক কালকে, হয়ে উঠুক কালোত্তীর্ণ। অভিন্ন সুরে কথাগুলো বললেন স্থপতি সাদিক ও স্থপতি সাবরিনা। তারা গড়ে তুলেছেন এইজ এন্ড এজ আর্কিটেকচার স্টুডিও নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
তাদের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে মতিঝিলে ডাচবাংলা ব্যাংক এর হেড কোয়ার্টার বিল্ডিং, বসুন্ধরায় সি এন এস এর হেড কোয়ার্টার বিল্ডিং, বনানী ১১ তে আলামিন বিজনেস বে, চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, গাজীপুরে আলামিন ফরেস্ট বিট্রিট, ডাঃ মনোয়ার তারিক ও ডাঃ শারমিন আফতাব এর ভ্যাকেশন হাউস, গাজীপুরে সুশীল রোজারিও সিঙ্গেল ফ্যামিলি রেসিডেন্স, গুলশানে আলমগীর শামসুল আলামিনের সিঙ্গেল ফ্যামিলি রেসিডেন্সসহ অসংখ্য রেসিডেনসিয়াল এবং কমার্শিয়াল প্রজেক্ট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী , জামালপুর , মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মসজিদসহ অসংখ্য ভবনের নকশা করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তারা।
চট্টগ্রাম শহর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কীর্তির পীঠস্থান। এই শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আন্দরকিল্লা এলাকা এবং এর ঐতিহাসিক নিদর্শন “আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ” অতীতের অনেক স্মৃতি বহন করে চলেছে। এই মসজিদটি ১৬৬৭ সালে মুঘল সুবেদার বায়োজিদ খান পন্নী এর আদেশে নির্মিত হয়। যা মুঘল স্থাপত্য শৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এই মসজিদ শুধু একটি উপাসনালয় নয় বরং এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও বিবেচিত। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নামাজ আদায় করতে আসে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। জুম্মার নামাজে এই মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় , যা এর জনপ্রিয়তা এবং গুরুত্বের প্রমাণ। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ প্রকল্পটি সম্পর্কে প্রকল্পের দলনেতা স্থপতি সাদিক বলেন, আমি প্রথমেই এই প্রকল্পের ঐতিহ্য নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। ১৬৬৭ সালে স্থাপিত মুঘল মসজিদটি আমরা তখনই হারিয়ে ফেলি, যখন ব্রিটিশরা অস্ত্রাগার হিসাবে ব্যবহারের জন্য এর এক্সটেনশন করে। কালের প্রবাহে মসজিদ হিসেবে একে ফিরে পেলেও ঐতিহাসিক স্থাপত্যটি ঢাকা পড়ে যায়। নামাজ কায়েম করার জন্য চট্টগ্রামবাসীর কাছে এটি অন্যতম কাঙ্ক্ষিত স্থান। তাই বারবার এর ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির


সম্পর্কিত

পুরস্কার হাতে এইজ এন্ড এজ আর্কিটেকচার স্টুডিওর টিম

পরেও মুসল্লিদের স্থান সংকুলান এর সমস্যা এখনো বাস্তবতা। মসজিদের পাদদেশে গড়ে তোলা মার্কেট অংশটির আলো বাতাসের স্বল্পতা সহ সার্বিক অবস্থা সংগীন। আবার শহরের দিকে যদি তাকাই, প্রকল্পের পূর্ব দিকের রাস্তার অনেকটা হকার এবং অবৈধ পার্কিংয়ের দখলে, রাস্তাটি এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রশস্থ, ফলাফল রোজকার যানজট গন ভোগান্তি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বাস্থ্ইকে ধন্যবাদ এই ইস্যুগুলোকে অনুধাবন করে এ থেকে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে। এত এত সমস্যা গুলোর সমাধানের চেষ্টা আমরা কিভাবে করেছি সেটা একটু বুঝিয়ে বলতে চাই, মুঘল মসজিদটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব মাথায় রেখে স্থাপনাটি রেনোভেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মসজিদটিকে কেন্দ্র করে একটি উন্মুক্ত চত্বর এবং চত্বরের তিন পাশ জুড়ে নতুন মসজিদের নকশা করা হয়েছে। এই মসজিদের সর্বমোট ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ১২,০০০ জন , এর মধ্যে ৫০০ জন মহিলার নামাজের ব্যবস্থা আছে , এছাড়াও মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য ফাংশনের সংস্থান করা হয়েছে। মার্কেটের আলো বাতাসের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। এই পরিসর এখন অনেক বেশি জনবান্ধব এবং আকর্ষক। এছাড়া মার্কেটের ছাদের অংশগুলো মানুষের গ্যাদারিং স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া পূর্বের রাস্তার দিকে প্রায় প্রশস্থ স্থান রাখা হয়েছে যা একই সাথে দোকানের সামনে চলাফেরার জায়গা হিসেবে কাজ করে, যা দোকান গুলোর ভিজিবিলিটি এবং জন সম্পৃক্ততা বাড়ায় অপরদিকে রাস্তার উপর চাপ কমানোর জন্যে যথেষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে বেইজমেন্টে। মসজিদ নকশা করার সময় অনুপ্রেরণার স্থানে ছিল মসজিদে নববী, দিল্লি জামে মসজিদের নকশা। যেহেতু ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়টি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করেছি মসজিদের নতুন অংশটা যতটা সম্ভব সিম্পল রাখতে। একই সাথে ঐতিহ্য এবং চাহিদা পূরণ করে স্বকিয়তা বজায় রাখতে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত এই প্রতিযোগিতা গুলোতে এক একটি টিমে অনেক স্থপতি একসাথে কাজ করে থাকে। প্রকল্পটিতে আমাদের অনেক সদস্য কাজ করেছেন যাদের প্রত্যেকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল এই অর্জন। স্থাপত্য নকশা প্রণয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকে এবং প্রত্যেক পর্যায়ের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন স্কিল সেট প্রয়োজন হয়।আর একের পর এক এই কাজগুলো যোগ করেই আসে চূড়ান্ত ফলাফল। এই সুযোগে আমরা দলের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের নাম গুলো স্মরণ করতে চাই। আমাদের চেয়ারম্যান জনাব আফতাব উদ্দিন, আমার পার্টনার সাবরিনা, অনির্বাণ। লোপা, মাহমুদ, ফয়সাল, রিফাত, হামিম, তুলি, ঈষিকা আপু, রিয়াদ, আকাশ, সাদিক, কিংশুক নাবিল, মাফি, আফুল্লা, উচিনু সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জাতীয় পর্যায়ের নকশা প্রতিযোগিতায় এই প্রকল্পটি এইজ এন্ড এজ আর্কিটেকচার স্টুডিও এর প্রথম সাফল্য না। মূলধারার স্থাপত্যে সফল পদচারণার পাশাপাশি একাধিক স্থাপত্য প্রতিযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠানের স্থপতিরা নিজেদের প্রতিভার নিদর্শন রেখেছে। ২০১৩ সালে আয়োজিত আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম এর হেড কোয়ার্টারের নকশা প্রতিযোগিতা দ্বিতীয় স্থান। ২০১৬ সালে স্থাপত্য অধিদপ্তর আয়োজিত নাগাসাকি পিস পার্ক মনুমেন্ট প্রতিযোগিতায় অনারারি ম্যানশন এবং ২০২২ সালে আয়োজিত গোল পাহাড় মহাশ্মশান টেম্পল কমপ্লেক্স।
অতীত থেকে আবার বর্তমানে ফিরে আসি। আন্দরকিল্লা ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য। এটি শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, বরং আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের একটি গৌরবময় নির্দেশন।এই ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণ করা সকলের দায়িত্ব। আশা করি ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বাস্থ্ই যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগুচ্ছে, এই প্রকল্পটি সঠিক এবং সুচারু বাস্তবায়ন তাদের এই উদ্যোগকে বাস্তব রূপ দিবে।

Scroll to Top