স্থপতি সাইফুল ও জিনাতের স্থাপত্যভুবন – আনন্দ আলো

স্থপতি সাইফুল ও জিনাতের স্থাপত্যভুবন – আনন্দ আলো

আধুনিক স্থাপত্যশিল্পে পরিবেশ বান্ধব ও সৃজনশীল ডিজাইন করে যাচ্ছেন স্থপতি মোঃ সাইফুল আনাম ও স্থপতি জিনাত ইসলাম। তারা বন্ধু এবং স্বামী স্ত্রী। দু’জনেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে পড়াশোনা করেছেন। তাদের রয়েছে চতুষ্কোণ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থপতি মোঃ সাইফুল আনাম ও স্থপতি জিনাত ইসলাম। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার নকশা করেছে। বর্তমানে জিনাত ইসলাম ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান এর দায়িত্ব পালন করছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

স্থপতি মোঃ সাইফুল আনাম এর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। বেড়ে ওঠা খুলনায়। সাইফুলের বাবার নাম মোঃ খায়রুল আনাম। তিনি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। মা মিসেস নুরজাহান আনাম গৃহিণী। তিন ভাই বোনের মাঝে ছোট স্থপতি মোঃ সাইফুল আনাম।
খুলনার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এস এসএসসি ১৯৯৯ সালে ও ২০০১ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে। ২০০৭ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রী লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি যোগ দেন ফোর ওয়ালস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে চার বছর কাজ করেন। তারপর টেকভেন প্রপার্টিজ লিমিটেডে সাড়ে চার বছর কাজ করেন। ২০১৫ সালে স্ত্রী স্থপতি জিনাত ইসলামকে নিয়ে গড়ে তোলেন চতুষ্কোণ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
তিন ভাই বোনের মধ্যে ছোট স্থপতি জিনাত ইসলাম। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদীতে। কিন্তু জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনায়। জিনাতের বাবার নাম মোঃ নজরুল ইসলাম। তিনি বেসরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা ফাতেমা বেগম গৃহিণী। খুলনা গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ২০০৪ সালে। ২০০৬ সালে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে।
২০১২ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রী লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি যোগ দেন ফোর ওয়ালস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিনি দুই বছর কাজ করেন।
২০১৪ সালে তিনি লেকচারার হিসেবে যোগ দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে। সেখানে তিনি সাড়ে চার বছর শিক্ষকতা করেন। তারপর জিনাত ইসলাম সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগে। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এর দায়িত্ব পালন করছেন।


সম্পর্কিত

স্থপতি মোঃ সাইফুল আনাম ও স্থপতি জিনাত ইসলাম

২০১৫ সালে স্থপতি মোঃ সাইফুল আনাম স্ত্রী স্থপতি জিনাত ইসলামকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘চতুষ্কোণ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন স্থপতিদ্বয়। ২০২০ সালে জিনাত ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থাপত্যচর্চা করে যাচ্ছেন তিনি। চতুষ্কোণ এর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ফরিদপুরে মিয়া বাড়ি ট্রিপলেক্স ভবন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জে এন্ড জে ভিলা, উত্তরায় হেজেল ডেন, প্রিয়াংকা রান ওয়ে সিটি, বসুন্ধরায় মজুমদার প্যালেস, উত্তরা এবং গুলশান-২ এ বিয়ান ক্যাফে এর ইন্টেরিয়র ডিজাইন, নরসিংদীতে ভ্যাকেশন হাউস অমরাবতী, মানিক মিয়া এভিনিউর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাটবিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম এর স্মৃতিঘর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় হানিডেল রেসিডেন্স, ক্যামেলিয়া রেসিডেন্স, জেমস গার্ডেন, সালেহ ওয়াসিস আবাসিক ভবন, মোহাম্মদপুরে ছোটগল্প ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়র ডিজাইন, উত্তরায় টিভলিসি ম্যানসন সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র। এ ছাড়াও নতুন কাজের মধ্যে রয়েছে পূর্বাচলের জল সিঁড়ি আবাসনে লুমেরী ভবন, বসুন্ধরায় ওলিয়ানা লফট, মর্নিং ব্রীজ, উত্তরা প্রিয়াংকা সিটির সান ক্রফ্ট ইত্যাদি।
স্থপতি সাইফুল আনাম ও স্থপতি জিনাত ইসলাম বলেন, আর্কিটেকচারাল কনসেপ্ট এবং টেকসই নির্মাণ একে অপরের পরিপূরক। একটি স্থাপনার ডিজাইনে যদি টেকসই উপকরণ এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি অন্তর্ভূক্ত করা যায়, তাহলে তার আর্থিক এবং পরিবেশগত সুবিধা দীর্ঘ সময় ধরে টিকবে, পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে। স্থপতি হিসেবে নতুন এবং সৃজনশীল ডিজাইন করার সাথে সাথে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, স্ট্রাকচারাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবেশগত পরিকল্পনা এবং বিল্ডিং কোডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা কাজ করি। এ ক্ষেত্রে সব সময় অগ্নি নিরাপত্তা, আবহাওয়া, জলবায়ুকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নকশা বাস্তবায়ন করে থাকি। স্বল্প পরিমাণ ভূমিতে পরিসরের সবোর্চ্চ যথাপোযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করণ আমাদের কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট। স্থাপনার সৌন্দর্য এবং আঙ্গিক সংস্থান পরিবেশের সাথে সমন্বয়, স্থাপনাটির ব্যবহার উপযোগিতা, এর অভ্যন্তরীন স্থান এবং প্লানিং, স্পেসের বিভিন্ন অংশ এবং তাদের সঠিক বন্টন, স্থান বা এলাকার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে আর্কিটেকচারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ব্যবহারকারীর স্বপ্ন, ধারণা এবং প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে আমরা বাস্তবসম্মত রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করি। স্থাপত্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের সাথে সাথে প্রাকৃতিক আলো এবং বায়ু চলাচল সমৃদ্ধ স্পেসের সরল স্থানিক বন্টনের মাধ্যমে স্থাপনাটির ব্যবহারকারীদের সুস্থ্য ও আরামদায়ক ব্যবহার এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় উপকরণ ও নির্মাণ কৌশল ব্যবহার করে একটি স্থাপতর তৈরি করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। দেশ ও সমাজের প্রতি স্থপতির দায়বদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থপতির দায়িত্ব কেবল ডিজাইন বা নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা সমাজের উন্নয়ন এবং দেশের ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আধুনিক নগর ও গ্রামের জন্য একটি সুরক্ষিত পরিস্কার এবং দক্ষ অবকাঠামো নির্মাণ, যা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ এবং সুন্দর করে। এমন ভবন এবং অবকাঠামো ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চাই যা পরিবেশবান্ধব, শক্তি সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহারের উপযোগী। প্রকল্পের আকার বা ধরণ যেমনই হোক পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।
তরুন স্থপতিদের উদ্দেশ্য স্থপতি সাইফুল আনাম ও স্থপতি জিনাত ইসলাম বলেন, এই সময়ের নবীন স্থপতিদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো টেকসই নির্মাণ কৌশল গুলোর সাথে ডিজাইন করা। নতুন স্থপতিদের সাসটেইনেবল ডিজাইন এবং পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব থাকতে হবে। তারা প্রাকৃতিক উপকরণ, শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব কৌশল ব্যবহার করে ডিজাইন করবেন। যাতে ভবনগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। পাশাপাশি পরিবেশের জন্য যেন ক্ষতিকারক না হয়। স্থাপত্য প্রকল্পগুলো বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সম্পর্কযুক্ত যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবহন, নগর পরিকল্পনা এবং আরো অনেক কিছু। নতুন স্থপতিদের বিভিন্ন ধরনের ডিসিপ্লিনের সাথে সহযোগিতা মূলক কাজ করার ক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে তারা একটি কার্যকরী ও সবদিক থেকে সমন্বিত ডিজাইন প্রদান করতে পারেন। স্থপতিদের অবশ্যই নিরাপত্তা বিধি এবং নির্মাণ আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। নিজের চিন্তা ও সৃজনশীলতার প্রতি তাদের অঙ্গীকার থাকতে হবে। তবে অবশ্যই তারা ক্লায়েন্টের চাহিদা এবং প্রকল্পের উদ্দেশ্যও বিবেচনা করবেন। এটি তাদের কাজকে বিশেষ এবং অন্যান্য স্থপতির থেকে আলাদা করবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজের দিকে নজর দেন স্থপতি সাইফুল আনাম ও স্থপতি জিনাত ইসলাম। পেশার সাথে দায়বদ্ধ থেকে তাদের কাজটিকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে ভালোবাসেন।

Scroll to Top