এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
ভারতে ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের জন্য আসা শত শত এইচ-১বি ভিসাধারী হঠাৎ করেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নতুন সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই নীতির কারণে তাদের নির্ধারিত কনস্যুলার সাক্ষাৎকার বাতিল বা পিছিয়ে আগামী বছরের মার্চে করা হয়েছে। ফলে অনেকেই ছুটির মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে না পেরে ভারতে আটকা পড়েছেন।
সোমবার ২২ ডিসেম্বর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মাসের শুরুতে যেসব এইচ-১বি ভিসাধারী ভারতে এসেছিলেন, তাদের অনেকের সাক্ষাৎকার ১৫ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে থাকা এসব সাক্ষাৎকার হঠাৎ করেই আগামী বছরের মার্চে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইমেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জানিয়েছে, নতুন সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিং নীতির কারণে এই বিলম্ব হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো-কোনো আবেদনকারী যেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি না হন তা নিশ্চিত করা।
শীর্ষস্থানীয় একাধিক অভিবাসন আইন সংস্থা জানিয়েছে, তাদের শত শত ক্লায়েন্ট বর্তমানে ভারতে আটকে আছেন। ভারতের অভিবাসন আইনজীবী বীণা বিজয় অনন্ত এই পরিস্থিতিকে “অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খলা” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এত বড় পরিসরে এমন বিলম্ব আগে দেখা যায়নি এবং এর কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও চোখে পড়ছে না।
ডেট্রয়েট শহরতলিতে বসবাসকারী এক এইচ-১বি কর্মী, যিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে এসেছিলেন, তিনি জানান, তার কনস্যুলার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল ১৭ ও ২৩ ডিসেম্বর। এখন সেই তারিখগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানিতে তারা কর্মরত, সেগুলো কর্মীদের ফিরে আসার জন্য কতদিন অপেক্ষা করবে, তা নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এরই মধ্যে ৯ ডিসেম্বর ভারতে মার্কিন দূতাবাস একটি পরামর্শ জারি করে জানিয়েছে, যেসব আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার পুনঃনির্ধারিত হয়েছে, তারা পূর্বনির্ধারিত তারিখে কনস্যুলেটে এলে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। দূতাবাস জানায়, নতুন নির্ধারিত তারিখেই আবেদনকারীদের সহায়তা করা হবে।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস)-এর এপ্রিল মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট এইচ-১বি ভিসাধারীদের প্রায় ৭১ শতাংশই ভারতীয়।
এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উপরও। বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুগল ও অ্যাপল তাদের কিছু কর্মীকে বিদেশ ভ্রমণ এড়াতে সতর্ক করেছে। মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে ভিসা পুনঃপ্রবেশ প্রক্রিয়াকরণে ১২ মাস পর্যন্ত বিলম্ব হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপিতে।
গুগলের বহিরাগত পরামর্শদাতা সংস্থা বিএএল ইমিগ্রেশন ল এক ইমেলে কর্মীদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে এবং সতর্ক করেছে যে, এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে দীর্ঘ সময় আটকে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এইচ-১বি ও এইচ-৪ ভিসা আবেদনকারীদের জন্য বর্ধিত যাচাই প্রক্রিয়া চালু করেছে, যার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল পর্যালোচনাও রয়েছে। আবেদনকারীদের গোপনীয়তা সেটিংস ‘পাবলিক’ রাখতে বলা হয়েছে। এর আগে শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটরদের ক্ষেত্রে এই ধরনের স্ক্রিনিং চালু থাকলেও, এবার তা কর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি ভিসা সিদ্ধান্তই একটি জাতীয় নিরাপত্তা সিদ্ধান্ত। এই সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই এইচ-১বি কর্মসূচির ওপর সাম্প্রতিকতম কঠোর পদক্ষেপগুলোর একটি, যা দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অন্যতম প্রধান পথ।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন এইচ-১বি ওয়ার্ক ভিসার ওপর এককালীন ১ লাখ ডলার ফি আরোপের ঘোষণা দেয়, যা ভারতীয় কর্মীদের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, একটি সহিংস ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ১৯টি উদ্বেগজনক দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য গ্রিন কার্ড, নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অভিবাসন আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
সব মিলিয়ে, নতুন নীতির কারণে এইচ-১বি ভিসাধারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে, বিশেষ করে যারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আটকে আছেন।




