সুদানের কালোগিতে আরএসএফের হামলায় শিশুসহ ১১৪ জন নিহত | চ্যানেল আই অনলাইন

সুদানের কালোগিতে আরএসএফের হামলায় শিশুসহ ১১৪ জন নিহত | চ্যানেল আই অনলাইন

সুদানের দক্ষিণ কর্ডোফান রাজ্যের কালোগি এলাকায় র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর ভয়াবহ হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ১১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪৬ জন শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাহী পরিচালক।

রোববার ৭ ডিসেম্বর আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফা হামলায় ৭১ জন নিহত হওয়ার পর আহতদের উদ্ধার করতে গেলে প্যারামেডিকদের ওপর দ্বিতীয়বার হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক। সংস্থাটি বলেছে, এই দ্বিতীয় হামলা “অপ্রত্যাশিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” ছিল।

সরকার-সমর্থিত সুদানী সশস্ত্র বাহিনীর (এসএএফ) সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ প্রথমে একটি কিন্ডারগার্টেন লক্ষ্য করে আঘাত হানে। এরপর সাহায্য করতে ছুটে আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ড্রোন হামলা চালানো হয়। শহরের হাসপাতাল এবং একটি সরকারি ভবনেও বোমাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউনিসেফের সুদান প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, স্কুলে শিশুদের হত্যা করা মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন। তিনি সকল পক্ষকে দ্রুত আক্রমণ বন্ধ এবং মানবিক সহায়তার জন্য নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

প্রাথমিকভাবে সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানায়, আরএসএফ ও মিত্র সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট-নর্থ (আল-হিলু) কালোগিতে আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালিয়ে অন্তত নয়জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারীও ছিলেন। সংগঠনটি বলেছে, এই হামলা “আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।”

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতরা চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এটি দেশের চলমান তৃতীয় বছরের গৃহযুদ্ধে আরএসএফ–এর বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। তবে এসএএফের বিরুদ্ধেও একই ধরনের নৃশংসতার অভিযোগ আছে।

জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, কর্ডোফান অঞ্চলটি এখন গণহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক জানান, দারফুরের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর কর্ডোফানে “ইতিহাস পুনরাবৃত্তি” ঘটছে।

অক্টোবরের শেষ থেকে এ অঞ্চলে বিমান হামলা, কামানের গোলা ও সংক্ষিপ্ত হত্যাকাণ্ডে ২৬৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরএসএফ পশ্চিম কর্ডোফানের বাবনুসা শহর দখল করে নিয়েছে বলে দাবি করেছে, যদিও সেনাবাহিনী তা অস্বীকার করেছে। দারফুরের এল-ফাশার শহর পতনের পর এখন উভয় বাহিনীর দৃষ্টি কর্ডোফানের দিকে।

কর্ডোফান অঞ্চলটি দারফুর এবং রাজধানী খার্তুমের মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। এই অঞ্চলের প্রধান শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ আরএসএফকে খার্তুমের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ খুলে দিতে পারে। এ কারণে অঞ্চলটিতে লড়াই তীব্রতর হচ্ছে।

দারফুরে জাতিসংঘের আগাম সতর্কতা অগ্রাহ্য করার পর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটে। স্যাটেলাইট ছবিতে মৃতদেহের অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঘটনাটিকে “অপরাধের দৃশ্য” বলে বর্ণনা করেন। এরপর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধ তদন্তের দাবি জানায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরএসএফের অন্যতম শীর্ষ নেতা আবদেল রহিম দাগালোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সুদানে যুদ্ধ ক্রমশ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিচ্ছে, আর বেসামরিক মানুষের জীবন প্রতিদিন আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।

Scroll to Top