নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছেন সুনামগঞ্জ সদরের সেলিনা বেগম। তবে বিয়ের কিছুদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়েন স্বামী। অভাবের সংসারের হাল ধরে ঘরে সাথে দোকান দিয়ে চালাতেন সংসার। তবে মেঘালয় পাহাড়ের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে সেলিনার বাড়ি। সাথে ভেঙে গেছে দোকানের স্বপ্ন। এখন বাড়ি ও দোকান হারিয়ে গত ৮ দিন ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে কাটছে সেলিনার দিন।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে অস্থায়ী ঠাঁই মিললেও হয়নি সেলিনার পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা। তাই আশ্রয়ের জায়গায় দোকান দিয়ে আয় করার চেষ্টা করছেন এই নারী।
সেলিনা বলেন, আমার আয়ের একমাত্র পথ ছিল দোকানটি। তবে এই দোকানটাই তলিয়ে গিয়েছে ঘরের সাথে। এখন পরিবারের খরচ চালানোর মত তো উপায় নাই। তাই বাধ্য হয়ে এখানে দোকান দিয়েছি। এখানে থাকার জায়গা পেলেও খাবার মিলছে না।
তিন ছেলে মেয়ের জননী সেলিনা। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে আশ্রয় কেন্দ্রের এক দিকে সামলাচ্ছেন দোকান, আরেক দিকে সামলাতে হচ্ছে সংসার। দৈন্যদশার জীবনে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চললেও তলিয়ে যাওয়া ঘর বাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তিনি।
সেলিনা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার ছেলে মেয়েগুলোকে ঈদের দিন থেকে ভালো কিছু খাওয়াতে পারি নাই। একটা ডিম কিনে এনে খাওয়ানোর সামর্থ্য এখন নেই। শুধু চিড়া মুড়ি আর গুড় খেয়ে আছি আমরা। জেলা প্রশাসন থেকে খাবার দিচ্ছে না। আমরা তো আরও বেশ কিছুদিন যেতে পারব না বাসায়। গেলেও বাড়ি ঘর ঠিক করতে আমাদের সময় লাগবে। ঘর ঠিক করার টাকাও নাই। আমাদের গরিবের কপালেই এমন হয়।
সেলিনার মত এই আশ্রয় কেন্দ্রসহ সুনামগঞ্জের ৫৩০টি আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক হাজার পরিবারের গল্পটা একই রকম। বন্যার কবলে পড়ে বাড়ি ঘর সর্বস্ব হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছে বানভাসি মানুষ। খাদ্য সংকট ও পানি সংকটে নাজুক অবস্থা আশ্রয় নেওয়া মানুষের।
আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দাদের অভিযোগ কোন সহায়তা পাননি জেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। ত্রাণ ও খাবার দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা মেলেনি তাদের ভাগ্যে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি কিছুই এমন অভিযোগও মিলছে বানভাসি মানুষদের কাছ থেকে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ রাসেল ইকবাল চৌধুরীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।