রাজনৈতিক চিন্তাধারা ছাড়া দেশের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু বই পড়ে হয় না। বই পড়ার সঙ্গে আমাদের মাটি ও মানুষের সম্পর্কে জানতে হবে।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বারবার সেটা মোকাবিলা করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি। এবারের নির্বাচন নিয়েও বিরাট চক্রান্ত ছিল। চক্রান্তটা ছিল যেন নির্বাচনটা না হয়। অর্থাৎ নির্বাচিত সরকারের কারণে বাংলাদেশের মানুষের যে আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে, এটাই অনেকের সহ্য হয়নি। তাই এমন একটা চক্রান্ত শুরু করেছিল যার ফলে বিএনপি নির্বাচনে আসে নাই। নির্বাচন বানচাল করবার জন্য তাদের জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস।
জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই সঙ্গে তারা যুগিয়েছিল কিছু প্র্রভু। তাদের নির্দেশ মত আন্দোলন করে। এখনো কিছু কিছু লম্ফঝম্প করছে, করতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের সংগঠন এটা তাদের মনে রাখতে হবে, এটা ভেসে আসেনি, কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল পকেট থেকে এ সংগঠন বের হয়নি। এটা মাটি-মানুষের ভেতর থেকে সংগঠন বেড়ে উঠেছে। মানুষই এ সংগঠনের বড় শক্তি।
নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের আইন করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ইসিকে শক্তিশালী করতে প্রতিটি নির্বাচনের পরে বিভিন্ন সংস্কার করার কথা তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এ সাহস একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ জনগণের উপর আস্থা-বিশ্বাস আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনো তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হবার ষড়যন্ত্র হচ্ছিলো জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন আমি দেখলাম এবারের নির্বাচন নিয়ে বিরাট ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যাতে ভোটার না আসে, নির্বাচনটা অবাধ না হয়, নির্বাচনটা যেন হতে না পারে বা নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে- এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল নিষেধাজ্ঞা দেবে তখন আমিও বলে দিয়েছিলাম দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, আমারও দিতে পারি, আমি নিষেধাজ্ঞার রীতি-নীতি জানি বলেই বলেছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন কষাকষি, নানা রকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে, এখন ভুলে যেতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোন আত্মঘাতি সংঘাত যেন না হয়। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দোষারোপ করার অর্থ হয় না। এবার নৌকার জোয়ার ছিল, সব থেকে বেশি মহিলারা ভোট দিতে এসেছিল। সেই জোয়ারে বিরুদ্ধে যদি কেউ দাঁড়াতে না পারে সেটা কার দোষ, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। একে ওকে দোষারোপ করে লাভ নেই।
এবারকার নির্বাচন যদি উন্মুক্ত না হত, তাহলে শুধু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা না, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হত। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার অর্জন নস্যাৎ হয়ে যেত। এই অর্জনকে ধরে রাখার জন্য আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছি, বলবেন না এটা আমরা ভুলে যায়। প্রতিবছর বাজেট সময় নির্বাচনী ইশতেহার দেখেই করার হয়।
দ্রব্যমূল্য কমাতে সকলকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে বা পাইকারী বাজারে, অথবা মজুদদারী, এসব জায়গায় চাঁদাবাজী ও অবৈধ মজুদদারী বন্ধ করতে হবে। মাল আসলে পাইকারী বাজারে চাঁদাবাজি, চলার পথের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আপনারা এখানে আছেন বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, এখানে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষক যাতে ন্যায্য মূল পায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে যে অর্থ আমরা ব্যয় করি তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কাজেই এখন থেকে যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে তাকে ততবেশি দাম দিতে হবে। আমরা সেই ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যারা একেবারে পারবে না তাদের জন্য ছাড় আছে। কিন্তু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যারা ব্যয় করবে তাদের অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে। সেইভাবে আমরা একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি।