জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় রমজানে সেহরি খেতে লোকজনকে ঘুম থেকে জাগাতে মাইকিং করার দায়ে পুলিশি হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী পাঁচ যুবক।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সাহরি খেতে লোকজনকে ঘুম থেকে জাগাতে মাইকিং করার দায়ে ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিৎ দাস তাদের হেনস্তা করেছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করে জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলালের কাছে তারা পুলিশি হেনস্তার ঘটনার বর্ণনা করেছেন।
এ নিয়ে সর্বমহলে পুলিশি কার্যক্রম ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, ‘ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়া হচ্ছে। মূলত উচ্চ শব্দে মাইকে গান-বাজানোর দায়ে ওইসব যুবককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।’
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ধর্মমন্ত্রীর কাছে ভুক্তভোগীদের কয়েকজন পুলিশি হেনস্তার কথা বর্ণনা করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে ইসলামপুর থানা মোড়স্থ জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে ডেকে নিয়ে অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের কাছে ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা শুনে বিষয়টি ধর্মমন্ত্রী সমঝোতা করে দেওয়ার কথা শুনা গেছে।
ভুক্তভোগীরা হলেন, পৌর শহরের কিংজাল্লা গ্রামের মৃত জবেদ আলীর ছেলে মো.মন্তু শেখ (৩৭), ফকিরপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে জনি মিয়া (২৮), গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে বাবু মিয়া (৩৫), পার্শ্ববর্তী মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নের দক্ষিণ বীর হাতিজা গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে আক্তার মিয়া (৪৪) এবং পশ্চিম বীর হাতিজা গ্রামের ফজল হকের ছেলে ফরিদ মিয়া (৪৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানে সেহরি খেতে পৌরবাসীকে ঘুম থেকে জাগাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন একটি মাইকিং দল। রমজানের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে পাঁচজন যুবক পৌর শহরের বিভিন্ন গলি দিয়ে মাইকিং শুরু করে। এতে প্রথম দিনই বিপত্তি বাঁধে এএসপি অভিজিৎ দাসের।
ভুক্তভোগী আক্তার মিয়া বলেন, ‘আমিসহ ফরিদ এবং বাবু সেহরি খেতে লোকজনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে ওইদিন রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু মোড় এলাকা মাইকিং করি। এ সময় গাড়ি থেকে বের হয়ে এএসপি অভিজিৎ দাস মাইকিং করার দায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ আমাদেরকে মারধর করে থানা হাজতে আটকে রাখে। আমাদের মোবাইল কেড়ে নেয়। পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতেও দেয়নি। থানা হাজতে আমাদের সেহরি খেতে দেয়নি। ভোর রাতে পৌর কাউন্সিলর মোহন মিয়ার হস্তক্ষেপে আমরা মুক্তি পাই।’
ভুক্তভোগী আক্তার মিয়ার মা আমেনা বেগম বলেন, ‘ফজরের নামাজের পর ছেলে আক্তার বাড়ি ফিরে। পুলিশ সেহেরির খাবার না দিলেও বিনা খাবারে সেদিন পোলা আমার রোজা রেখেছে। আমার পোলার কোনো দোষ ছিল না। রোজা রাখতে মানুষকে জাগাতে মাইকিং করায় পুলিশ আমার পোলারে মারছে। আল্লাহ পুলিশের বিচার করব।’
ভুক্তভোগী ফরিদ মিয়া বলেন, ‘থানায় সেহেরির খাবার না দেওয়ায় রোজা রাখতে পারিনি। বিনা অপরাধে এএসপি অভিজিৎ দাস আমাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। আমাদের পক্ষ থেকে ধর্মমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছিলো। তিনি এএসপি অভিজিতকে ডেকে ঘটনাটি শুনেছেন।’
ইসলামপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন মিয়া বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে ভোর রাতে থানায় যাই। তখন সম্ভবত ফজরের নামাজের আজান হয়েছে। পরে ওসি সাহেব ভুক্তভোগীদের আমার জিম্মায় ছেড়ে দেন। ভুক্তভোগীরা পুলিশি নির্যাতনের বিষয়টি ধর্মমন্ত্রী মহোদয়কে অবগত করেন। ডাকবাংলোতে ভুক্তভোগী মন্তু শেখের উপস্থিতিতে সেখানে এএসপি অভিজিৎ দাসকে ডেকে নেন মন্ত্রী মহোদয়। দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা করা হয়েছে। তবে ওইদিনের ঘটনাটি দুঃখজনক।’
ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোর রাতে কাউন্সিল মোহন মিয়ার জিম্মায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেহরি খাওয়ার কথা বলা হলে তারা খেয়েছে বলে জানিয়ে ছিল।’
পুলিশের ইসলামপুর সার্কেলের এএসপি অভিযুক্ত অভিজিৎ দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত ২টার থেকে উচ্চ শব্দে মাইকে মিউজিকের আওয়াজ শুনি। পরে আমাদের জরুরি পার্টি দিয়ে মাইকিং করার লোকদের থানায় আনি। তাদেরকে রাত ৩টার পর থেকে কম সাউন্ডে মাইকিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কাউকে মারধর কিংবা নির্যাতন করা হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ বেশকিছু জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘রোজা রাখতে মানুষকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে মাইকিংকারীদের পুলিশ থানায় আটক রেখে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। এটা ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
এ বিষয়ে ধর্মমন্ত্রী মো.ফরিদুল হক খান দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।