বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই আমরা। যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদের কোনো দেয়াল থাকবে না।
তিনি বলেন, আজকের এই আয়োজনটা আসলে একটা ভিন্ন মোড়কে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম বাংলাদেশের প্রধান চার ধর্মের লোক আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আমরা সকলেই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি; জন্মসূত্রে আমরা সকলেই প্রিয় দেশের নন্দিত ও মর্যাদাবান নাগরিক। আমাদের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মুসলমান এই চার ধর্মের অনুসারী মিলেই আমাদের এই বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১০ জুন) আমীরে জামায়াত আরও বলেন, আপনারা অনেকেই অভিযোগের সুরে বলেছেন যে, ৫ আগস্টের আগে আমাদেরকে নিয়ে আপনারা কখনই বসেননি; আমরাও যাইনি। আমরা সব সময় আওয়ামী লীগে ভোট দেই- এই ধারণা থেকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল।
এই অভিযোগের সূত্র ধরে আমীরে জামায়াত বলেন, শুধু আপনারা নন, গত ৫ আগস্টের আগে তো আমার মা-ও আমাকে পায়নি, আমার বাবাও আমাকে পায়নি, আমার স্ত্রী-সন্তানরাও আমাকে পায়নি। এটা শুধু আমার কথা বলছি না, আমাদের কথা বলছি। ৫ আগস্টের আগে আমাদেরকে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে দেওয়া হয়নি। আমি চোর-ডাকাত নই, দখলদার নই, চাঁদাবাজ নই, খুনি কিংবা সন্ত্রাসীও নই। তা সত্ত্বেও আমাকে কেন কয়েকবার জেলে রাখা হলো? এটা শুধু আমার ব্যাপারে না এই ধরনের ঘটনা লক্ষ লক্ষ রয়েছে। আমাদেরকে সমাজের মানুষের সুখ-দুঃখ, ব্যথা, বেদনার অংশীদার হতে দেওয়া হয়নি। তারপরও যেখানে খবর পেয়েছি সারা বাংলাদেশে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।
জামায়াতের আমীর বলেন, কিছুদিন আগে বরগুনায় পঞ্চম শ্রেণির একটি মেয়ের সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা থানায় মামলা করেছিলেন। লম্পটরা মামলা করার কারণে তার বাপকেও খুন করল। তিনি সনাতন ধর্মের অতি সাধারণ এজন মানুষ; মুরগী বিক্রির দোকানে চাকরি করতেন। এই দিয়ে তার ছোট্ট সংসারটি চলত। তিনটা মেয়ের মধ্যে নির্যাতিত মেয়েটি বড়। কোলের শিশুটির বয়স মাত্র আড়াই মাস। আমি সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের পাশে কারা কারা দাঁড়িয়েছেন? তারা বললেন, ডিসি সাহেব একজনের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। জিজ্ঞেস করলাম, আর কিছু কী তারা বলেছে? জবাব পেলাম, মামলাটা তারা দেখবেন। জিজ্ঞেস করলাম, এখন আপনারা চলবেন কিভাবে? তিনি বললেন, পরিবারের একমাত্র অভিভাবক মারা গেছেন; এই পরিবারে এখন আর কোনো পুরুষ সদস্য নাই। পরিবারটিতে এখন বিধবা স্ত্রী, আর তিনটা এতিম মেয়ে। মহিলাটি তখন কেঁদে কেঁদে প্রায় বেহুশ হওয়ার উপক্রম। সে হাউ মাউ করে বলল যে, আমরা এখন বাঁচব কী করে? কি খাব? কারা আমাদেরকে খাবার দেবে? আমাদের সংসারের একমাত্র বাতি সে তো নিভেই গেল। আমি তখন আড়াই মাসের বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলামঃ এই বাচ্চাটির দায়-দায়িত্ব আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা নিলাম। আজ পর্যন্ত আমাদের সংগঠন আল্লাহর অপার মেহেরবানিতে প্রতি মাসে এই অসহায় পরিবারটির আর্থিক ভরণ-পোষণ দিয়ে যাচ্ছে।”
অনুষ্ঠান শেষে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান উপস্থিত সকলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতাকে অতি কাছে পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হন।