শ্বেতপত্রের আলোকে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা | চ্যানেল আই অনলাইন

শ্বেতপত্রের আলোকে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

সদ্য প্রকাশিত শ্বেতপত্রের আলোকে দেশের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, পর্যালোচনা ও মতামত প্রদানের উদ্দেশ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করে সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক, এবং পেশাজীবীরা বিভিন্ন বিস্তারিত দিক নিয়ে আলোচনা করেন সেখানে।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এই অভ্যুত্থানের দর্শন এই শ্বেতপত্রে প্রতিফলন দরকার ছিল। আমি রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছি তার জন্য একটা নির্দেশনা খুব দরকার। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি খুঁজে বের করা জটিল কঠিন কোনো কাজ নয়। শ্বেতপত্রের কারণ হওয়া উচিৎ, বৈষম্যের কারণ খুঁজে বের করা।

এসময় মানবাধিকার কর্মী ও কবি ফরহাদ মজহার বলেন, এই রিপোর্ট দুর্নীতির ক্ষেত্রে ভালো হলেও স্বাস্থ্যখাতের জন্য ভালো। এই রাস্ট্র ব্যবস্থা এমন যে, বাজারই ঠিক করে সবকিছু। আমরা কিন্তু নিজেরাই ভ্যাক্সিন বানাতে পারতাম। আমরা তো টেস্ট কিটই বানাতে পারিনি। আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা, কৃষিখাত ঠিক না করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক করতে পারবেন না। শুধু দুর্নীতি ধরেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঠিক করে ফেলা যাবে না, খাদ্য এবং কৃষি ঠিক করতে হবে। আমাদের ডাক্তারদের হতে হবে একটিভিস্ট। আমি জানি না ড. ইউনুস কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনতিবিলম্বে গড়ে তুলতে হবে।শ্বেতপত্র আমাদেরকে কোনো গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করে না।

GOVT

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশে পুষ্টির যে ধারণা তা কিন্তু ওয়েল স্টাবলিশড না। আমরা যদি ইনফ্যান্ট নিউট্রিশনের দিকে তাকাই, আমাদের দেশে প্রসেস ফুডের প্রতি নির্ভরতা বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে পুষ্টির কনসেপ্টটা কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হয়না। এখানে, পুষ্টির ধারণা ভাত খাওয়ার পর ফল খাওয়ার পর সীমাবদ্ধ। তারপর আমিষের উৎসের জন্য মাছও সহজলভ্য না। আমাদের পুষ্টির মান নিশ্চিত করতে খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে থেকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা জরুরি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে দরকার সত্যিকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংস্কার। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালীন বেশ কিছু প্রস্তাব করেছিলাম। প্রথম প্রস্তাব ছিল স্বতন্ত্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এখন সবকিছু এলোমেলো। সবাই সেখানে পদায়ন নিয়ে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের যে বর্তমান দূরাবস্থা তা দূর করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা যখন বলি হেলথ ফর অল, সেটা মিন করেই বলা উচিৎ। আমাদের হেলথ পলিসি নাই। জিডিপির ৫% বরাদ্দ থাকা উচিৎ কিন্তু আমাদের তো ১%ও নাই। তারপর আবার দুর্নীতি হলে, থাকলো টা কী। ডা. জাফর উল্লাহর কথা মনে পড়ছে। ডা. ইউনুস খুব ভালো একটা কথা বলে যে, আমাদের সমালোচনা করেন। আমি মনে করি যে ডাক্তারের ফি দিতে পারবেনা সেও যেন চিকিৎসা পায়।

এ সভায় সচিত্র বক্তব্য উপস্থাপন করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. শারমিন নিলোর্মি। তিনি বলেন, শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য না থাকলে এক ধরনের প্রত্যাশা থাকতো। কিন্তু আমাদের চোর ধরবার দক্ষতা নেই। যারা চুরি করেন, তারাও প্রমাণ রেখে করেনি। প্রথমে বলি কীভাবে এই উপস্থাপন সাজালাম। আমরা স্বাস্থ্যখাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি এবং সেকেন্ডারি লিটারেচার রিভিউ করেছি। আমাদের একহাজার মানুষের জন্য ডাক্তার বরাদ্দ ৭জন।

সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ এর সদস্য সচিব ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, আমরা প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাই প্রয়োজন ছাড়াই। বাংলাদেশে আমারা যখন ছাত্র ছিলাম, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু ৪০ বছর পর দেখলাম সে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্তম্ভ। আজ একজন সালমান এফ রহমানকে জেলে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা চলতে থাকবে। আমরা সাধুবাদ জানাই এই শ্বেতপত্র প্রনয়নকে। আমাদের পক্ষ থেকে দাবি থাকবে, এই শ্বেতপত্রের আলোকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যখাতের একটি কমপ্রিহেনসিভ শ্বেতপত্র প্রনয়ন করতে।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, সদস্য, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, এবং অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, সহসভাপতি, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ), ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান, সদস্য, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ, আসাদুজ্জামান রিপন, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ, সভাপতি, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব), ফিরোজ আহমেদ, বিশিষ্ট লেখক, আসফিয়া আজিম, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল, ডা. এসএম খালিদ মাহমুদ শাকিল, সহযোগী অধ্যাপক, শিশু সার্জারী বিভাগ, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ, ডা. শারফুল ইসলাম খান (ববি), প্রধান, এইচআইভি ও এইডস প্রোগ্রাম, আইসিডিডিআর,বি।

Shoroter Joba

Scroll to Top