শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করে ভারত

শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করে ভারত

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রেসিডেন্ট হতে পারলে শুরুতেই সাতটি ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছিলেন। এখন সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের সময় ট্রাম্পের। গত মঙ্গলবার দেশটির ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন মসনদের ক্ষমতা পেয়েছেন। তিনি অভিবাসন, অর্থনীতি, ইউক্রেনের যুদ্ধসহ বেশকিছু ইস্যুতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তিনি এই কাজগুলো খুব সহজেই করতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকেই। কারণ রিপাবলিকান পার্টি সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার পরে কংগ্রেসে তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর সমর্থন পাবেন।

দেখে নেওয়া যাক তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো-

অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো

প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করা অভিবাসীদের তাড়ানো হবে। এর জন্য মেক্সিকো সীমান্তে একটি প্রাচীর নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

গত বছরের শেষ দিকে বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সময় দেশটির দক্ষিণ সীমান্তে ক্রসিংয়ের সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছিল।

তবে তার এমন সিদ্ধান্তত বাস্তবায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য নির্বাসনের আইনি জটিলতা ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করে দিতে পারে।

অর্থনীতি, ট্যাক্স এবং পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো 

এক্সিট পোলের তথ্য বলছে, মার্কিনদের জন্য এখন মূল সমস্যা হচ্ছে অর্থনীতি। ট্রাম্প মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশটিতে বাইডেনের সময় মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল।

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বেশিরভাগ বিদেশী পণ্যের উপর নতুন করে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত শুল্কের পরিমাণ আরও ৬০ শতাংশ আরোপ করতে চান।

তবে তার এমন সিদ্ধান্তকে কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো সাধারণ মানুষের জন্য আরও অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কারণ আমদানি খরচ বাড়লে পণ্যের দামেও সেই প্রভাব পড়বে। 

জলবায়ু নীতি

ট্রাম্প প্রথম ক্ষমতায় এসেই শত শত পরিবেশগত সুরক্ষা ফিরিয়ে আনেন এবং প্রথম দেশ হিসেবে আমেরিকাকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের করে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িশিল্পকে সহায়তার লক্ষ্যে জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া, দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলনও বাড়াতে চান তিনি।

তিনি তেল খননের জন্য আর্কটিক মরুভূমির মতো এলাকাগুলোতে অভিযান চালাতে পারেন। যদিও বিশ্লেষকরা তার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা 

ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচের সমালোচনা করেছেন। তিনি ২৪ ঘণ্টা বা একদিনের মধ্যে এই সংঘাত বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উৎসাহিত করবে।

ট্রাম্প কোনো যুদ্ধে জড়াতে চান না বলে আগেই জানিয়েছেন। তিনি বিদেশি সংঘাত থেকে আমেরিকাকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চান। তাই তো তিনি ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক হয়েও দেশটিকে এই অভিযান শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি লেবাননে সহিংসতা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

গর্ভপাত

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলো গর্ভপাত ইস্যু। যেখানে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ছিলেন গর্ভপাতের পক্ষে অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ছিলেন গর্ভপাত নিষিদ্ধের পক্ষে। তবে তিনি তার কিছু সমর্থকের কথা চিন্তা করে হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কের সময় জানিয়েছেন, তিনি গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞার আইনে স্বাক্ষর করবেন না।

যদিও তিনি পরবর্তীতে, প্রতিটি রাজ্যের আলাদা আলাদাভাবে গর্ভপাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারের থাকার পক্ষে বলেছেন।   

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে খারিজ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের রক্ষণশীল বিচারপতিদের অধিকাংশ ওই রায়ের পক্ষে ছিলেন।

৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা 

২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের কিছু সমর্থক ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তাদেরকে এই মামলা থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। 

এ ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যুর জন্য ট্রাম্পকেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ট্রাম্পের উস্কানিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। 

তিনি এমন ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলেছেন অনেককেই ওই সময় অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তবে তিনি এই হামলায় তার সমর্থকদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, সমর্থকদের কেউ কেউ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এই হামলা হয়েছে। 

স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন মার্কিন স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া ও সরকারি গোপন নথি সরানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছিল।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে জ্যাককে চাকরিচ্যুত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।

অক্টোবরে একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি দুই সেকেন্ডেই তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারি।’

Scroll to Top