শেখ হাসিনাকে তসলিমা নাসরিনের প্রশ্ন, নির্বাসিত জীবন কেমন বোধ হচ্ছে?

শেখ হাসিনাকে তসলিমা নাসরিনের প্রশ্ন, নির্বাসিত জীবন কেমন বোধ হচ্ছে?

২ যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাসিত বাংলাদেশি নারীবাদী লেখক, তসলিমা নাসরিন। ১৯৯৪ সালে তীব্র আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। নির্বাসিত জীবন নিয়ে বরাবরই নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন এই চিকিৎসক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ একাধিক গণমাধ্যমে জানিয়েছেন দেশে ফেরার আকুতি। কিন্তু বরাবরই হয়েছেন ব্যর্থ! এর জন্য দুষেছেন দেশের দুই নেত্রীকেই। ইউরোপ আমেরিকার পর সবশেষ তসলিমা এখন ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন। কাকতালীয়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভারতের রাজধানীতে রয়েছেন। এবার নিজের সাথে অনেকটা তুলনা দিয়ে এই লেখক শেখ হাসিনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। বললেন, নির্বাসিত জীবন কেমন বোধ হচ্ছে?

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাতায় একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তসলিমা। সেখানে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লেখেন, শুনেছি হাসিনা দিল্লিতে তাঁর মেয়ের বাড়িতে থাকছেন, পার্কেও নাকি ঘুরছেন। আমিও তো মাঝে মাঝে পার্কে যাই। যদি কোনোদিন দেখা হয়ে যায় তাঁর সঙ্গে? বাংলাদেশে দু’তিন বার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি যে কোনোদিন আমার বিরাট বড় শত্রু হয়ে উঠবেন, আমাকে দেশে ফিরতে দেবেন না, আমার বই ব্যান করবেন, এ তো কল্পনাও করিনি। তাদেরই তো খুশি করতে আমার শত্রুতা করেছিলেন, যারা দলবদ্ধ হয়ে তাঁকে দেশ থেকে বের করলো। মহিলাটা বন্ধু চিনতে বেজায় ভুল করেছেন। ভালো মানুষদের উপেক্ষা করেছেন। বদ লোকদের পুষেছেন।

তসলিমা লেখেন, কী বলবো? কেমন বুঝছেন মাননীয়া? নির্বাসিত জীবন কেমন বোধ হচ্ছে? এই তো শুরু, আমার মতো নিগৃহীত হন আরও ৩০ বছর, তারপর যদি আমার বেদনা বোঝার ক্ষমতা আপনার হয়! আমার আত্মীয় স্বজন এক এক করে মারা গেল, কারো পাশে থাকার জন্য আমাকে দেশে যেতে দেননি। দম্ভ দেখিয়েছেন। যেন আপনার বাবাই বাবা, আপনার স্বজনই স্বজন! আর কারো বাবা, আর কারো স্বজনের কোনো মূল্য নেই!

নিজেকে অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলেছিলেন ম্যাডাম। আপনার অনেক কাছের লোক, অনেক স্তাবক, কিন্তু আপনাকে এখন গালি দিচ্ছে। আর আপনি মোল্লাতোষণের রাজনীতি করে যেসব মৌলবাদি পয়দা করেছিলেন, যারা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী হয়ে আপনাকে তাড়ালো, তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু, আপনার শত্রু আমি, লড়ছি। তারা আপনাকে ঘৃণা করে বলে নয়, আমি লড়ছি দেশটাকে তারা ঘৃণা করে বলে, দেশটার সর্বনাশ তারা করছে বলে।

আপনি তো দেশকে বা দেশের মানুষকে কখনো ভালোবাসেননি, ভালোবেসেছিলেন শুধু নিজেকে আর নিজের আত্মীয় স্বজনকে, আর আস্কারা দিয়ে স্তাবকদের অমানুষ বানিয়েছিলেন! দেশে ফেলে এসেছেন লক্ষ কোটি রাজাকার, লক্ষ কোটি জিহাদি, লক্ষ কোটি নারীবিদ্বেষী ধর্মান্ধ। ইসলাম ইসলাম জপেই তো দেশের এই হাল করেছেন। মাদ্রাসা, মসজিদ বানিয়েছেন, মানুষকে আল্লাহ রসুল জপতে বলেছেন, আর কোরান হাদিসের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছেন সবাইকে। এসব থেকে কী জন্ম নেয়, জানতেন তো! জেনেশুনে দেশটাকে বিষ পান করিয়েছেন।

আপনার কর্মফল আপনি পেয়েছেন। কিন্তু আমি? সারাজীবন দেশ দেশ করে, দেশের মানুষের ভালো চেয়ে লেখালেখি করলাম, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করলাম, কী লাভ হলো? কিছুই না, কারণ দেশের মানুষকে আপনি মানুষ বানিয়ে আসেননি, এক একটাকে খুনি, বদমাশ আর অমানুষ বানিয়ে এসেছেন। নির্বাসনে আপনার কষ্ট হবে না। আপনার আত্মীয় স্বজন, আপনার আপন লোক তো দেশের বাইরেই সব, তাদের সাহচর্যে আর ধন দৌলতের মধ্যে চমৎকার কাটবে আপনার জীবন। আমার মতো আপনি তো আর একা নন, আমার মতো তো আর নিঃস্ব নন! বদ লোকেরা, আমি লক্ষ্য করেছি, বেশ সুখে শান্তিতেই জীবন কাটায়। ভালো লোকদেরই শুধু দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

তিনি কি কিছু বলবেন উত্তরে?

/এটিএম

Scroll to Top