শিবিরে নেতৃত্ব দাবি করে নেয়ার সুযোগ নেই: জবি সভাপতি

শিবিরে নেতৃত্ব দাবি করে নেয়ার সুযোগ নেই: জবি সভাপতি

শিবিরের কোন দায়িত্বশীল বা সদস্যের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ টেন্ডারবাজি বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে গণমাধ্যমে তথ্য প্রমাণসহ সংবাদ করার অনুরোধ জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন শিকদার বলেছেন, বংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির চর্চা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিগত সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রশিবিরকে দানব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরে ক্ষমতা নিয়ে দলাদলি হয় না। শিবিরের নেতৃত্ব দাবি করে নেয়ার সুযোগ নেই।

রোববার (১০ নভেম্বর) বিকাল ৩ টায় পুরান ঢাকার একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে আয়োজিত ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিবিরের ভবিষ্যত কার্যক্রম কেমন হওয়া উচিত- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পরামর্শ চান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

বিজ্ঞাপন

ইসলামী ছাত্রশিবিরের জবি শাখার সদস্যরা এখনও প্রকাশ্যে না আসার কারণ জানতে চাইলে শিবির সভাপতি বলেন, আমাদের সংগঠনের মোট সদস্যদের মধ্যে থেকে যারা কমিটির দায়িত্বে আছেন, তাদের অধিকাংশই আপনাদের সামনে আছেন। বাকি সদস্যরাও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সর্বদা সক্রিয় রয়েছে। আমাদের গোপন রাজনীতি করার কোনো উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় আমাদের দমন করে রাখা হয়েছে।

শিবিবের দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির একটি স্বতন্ত্র সংগঠন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অন্য সংগঠন আমাদের কমিটি ঘোষণা দেয়না। শিবিরে সকল সদস্য ভোট দিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন করে। এছাড়া প্রতিটা শাখা ইউনিটে সদস্যরা ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর প্রতি আনুগত্য, তাকওয়া, আদর্শের সঠিক জ্ঞানের পরিসর, সাংগঠনিক প্রজ্ঞা, শৃঙ্খলাবিধানের যোগ্যতা, মানসিক ভারসাম্য, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, কর্মের দৃঢ়তা, অনড় মনোবল, আমানতদারিতা এবং পদের প্রতি লোভহীনতার দিকে নজর রাখা হয়। নেতৃত্ব চেয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যিনি নেতৃত্বে আসতে চাইবে, সে পূর্বেই নেতৃত্বের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যেহেতু কেউ নেতৃত্ব আসার দাবি করতে পারে না, তাই আমাদের সংগঠনে পদ নিয়ে কোন ধরণের কোন্দলও নেই।

বিজ্ঞাপন

ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য, আল্লাহ প্রদত্ত রাসূল সা: প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাছাড়া আমাদের প্রতিটি কাজ নিজস্ব ‘কর্মপদ্ধতি’র আলোকে পরিচালিত হয়। আমাদের ‘কর্মপদ্ধতি’ নামে আলাদা বই আছে, সেটিতে বিস্তারিত বলা আছে। অমুসলিম ছাত্রদের নিয়েও আমাদের কাজ করা অবশ্যই পরিকল্পনা আছে।

ছাত্র সমস্যা সমাধানানে শিবির সব সময় কাজ করে জানিয়ে ইকবাল হোসেন বলেন, কনসাস স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অরগানাইজেশানের মাধ্যমে ছাত্রশিবির সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করে।

শিবির সভাপতি ও সেক্রেটারির কোন আলাদা গ্রুপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আল্লাহ নির্দেশিত একে অপরের সাথে সীসা ঢ়ালা প্রাচীরের মত সম্পর্ক রক্ষা করার চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে সভাপতি ও সেক্রেটারির মধ্যে আলাদ গ্রুপ থাকার কোনো প্রশ্নই উঠেনা।

জবি শাখা শিবির সেক্রেটারি মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সমাজের সঠিক অবস্থা তুলে ধরা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা সমাজের দর্পণ। কুরআনের ভাষ্যানুযায়ী আপনারা সত্য ও মিথ্যাকে মিলিয়ে ফেলবেন না। অন্যায় জুলুমকে কলমের মাধ্যমে তুলে ধরবেন।

আসাদুল ইসলাম আরও বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে আমরা নিজেদের জনশক্তি হিসেবে কল্পনা করি। কে শিবির করে, কে শিবির করে না, এভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের বিভক্ত করি না। কোনো শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়লে আমরা নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের আলোকে সহায়তা করার চেষ্টা করি। শিক্ষার্থীদের স্বার্থই আমাদের কাছে প্রধান্য পায়। সামনের দিকে আমাদের এসকল কার্য়ক্রম আরও বৃহৎ পরিসরে করবো, ইনশাআল্লাহ।

জুলাই আন্দোলনে শিবিরের ভূমিকা তুলে ধরে সেক্রেটারি বলেন, আমি গত সকল যৌক্তিক আন্দোলনে ছিলাম। আমার নামে চারটি মামলা রয়েছে। প্রচার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। আমরা যদি শিবির পরিচয়ে আন্দোলনে যোগ দিতাম তাহলে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করতো পতিত স্বৈরচার।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ শিবিরকে প্রকাশ্যে এবং দলীয় আধিপত্যের প্রভাব মুক্ত ছাত্ররাজনীতি, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও নারীদের জন্য সুরক্ষিত ক্যাম্পাসসহ ছাত্র-ছাত্রীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন।

এসময় জবি শাখা শিবিরের অফিস সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক শাহিন আহমেদ, দাওয়াহ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, বাইতুল মাল সম্পাদক মোহাম্মদ শাওন সর্দার, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইনুদ্দিন, স্কুল বিতর্ক ও তথ্য প্রযুক্তি নাহিদ হাসান রাসেল, আবাসন ও পাঠাগার সম্পাদক মো. মাসুম বিল্লাহ, এইচআরডি ও ব্যবসায় শিক্ষা সম্পাদক মো. জাহেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও জবির সংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।  

Scroll to Top