দেশের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ক্যাম্পাস ঘিরে সর্বদা শিক্ষার্থীদের আনাগোনা থাকলেও যানজটের নগরিতে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে পৌঁছানো ছিল তাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। তবে আজ থেকে চালু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশন। ফলে প্রথম দিনে নিজের ক্যাম্পাাসে মেট্রোরেলে আসতে পেরে অনেকটা উচ্ছ্বসিত ভাব প্রকাশ করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। সেই সঙ্গে দিনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে এই স্টেশনটি।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজয় সরণি মেট্রো স্টেশনের যাত্রী চলাচল শুরু হয়।
সরেজমিনে স্টেশনটিতে দেখা যায়, স্টেশনটি ঘিরে ছাত্র ছাত্রীদের চলাচলে মুখরিত হয়ে রয়েছে স্টেশনটি। একের পর এক ট্রেন থামলে সেগুলো থেকে নেমে আসছেন শীক্ষার্থীরা। স্মৃতি হিসেবে এই ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষি হয়ে থাকতে স্টেশনে সবাই মিলে ক্যামেরা বন্দী করছেন। কেউ কেউ আবার ক্লাস শেষ করে ফিরতি ট্রেনের টিকিট কাটতেও দেখা গেছে।
এছাড়া শীক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চলাচলের চিত্রও দেখা গেছে। এছাড়া স্টেশনে দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের দ্বায়িত্ব পালন করতেও দেখা গেছে।
এদিকে স্টেশনে দ্বায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা বার্তা২৪.কমকে জানান, দিনের শুরু থেকেই এই স্টেশনে শীক্ষার্থীদের চলাচল ছিল বেশি।
মো.মইনুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ আমারদের মাস্টার্সের শেষ ক্লাস। তারপরেও আমরা এখানকার শিক্ষার্থী হিসেবে শেষ দিনে হলেও আমরা মেট্রোরেলে আসতে পেরেছি এটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। ট্রেনে যখন ঘোষণা করছিলো এই স্টেশনের নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দরজা খুলবে বাম দিক থেকে তখন আমাদের মধ্যে একটা আবেগ কাজ করছিলো। এই স্টেশনটা যদি আমাদের আরও আাগে চালু হতো তাহলে আমাদের যে মূল্যবান সময় জ্যামে বসে কেটেছে, যে ক্লাসগুলো মিস করেছি সেগুলো মিস হতো না। সময়ও অপচয় হতো না।
চকবাজারের ব্যবসায়ি মো.জাহিদ চুন্নু বার্তা২৪.কমকে বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে বাসে উঠলে শাহবাগ আসতে আমার মিনিমাম দেড় ঘণ্টা সময় লাগত। কিন্তু আমি আজ মাত্র ১৫ মিনিটে চলে আসতে পেরেছি। আমার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
ঢাবির ছাত্র মাহফুজ হোসেন আয়ান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছাত্র হিসেবে সবসময় আমাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হয় খরচের বিষয়টা। মেট্রোরেলটা আমাদের জন্য ব্যয়বহুল হলেও যাতায়াতের ব্যবস্থা এবং সময় বিবেচনায় এই স্টেশনটা আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে।
ছাত্রী নেহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগে আমাকে ক্যাম্পাসে আসতে হলে সচিবালয় স্টেশেনে নামতে হতো। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে আবার ক্যাম্পাসে আসতে হতো। এখন আর সেই ঝামেলা থাকছে না। আমরা সরাসরি এসে ক্যাম্পাসের সামনে নামতে পারছি। আমাদের এই স্টেশনটা আসলেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যানজট নিরসনে রাজধানীতে চলাচলকারী মেট্রোরেলের বিজয় সরণি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চালু হয়েছে আজ। এখন থেকে এই পথে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিলের পর এবার আরও দুটি যুক্ত হয়ে মোট পাঁচটি স্টেশন চালু থাকবে স্বপ্নের মেট্রোরেল।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজয় সরণি মেট্রো স্টেশনের যাত্রী চলাচল শুরু হয়। এদিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সবগুলো স্টেশনের মধ্যে বন্ধ থাকছে আর মাত্র দুটি স্টেশন। এগুলো হলো কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ স্টেশন। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি চালু হতে পারে এ দুটি মেট্রো স্টেশনও।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক এ তথ্য জানান।
এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, জানুয়ারি মাসের মধ্যেই মেট্রোরেলের সবগুলো স্টেশন চালু করা হবে। ১৩ জানুয়ারি বিজয় সরণি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রোস্টেশন চালু করা হবে। সব স্টেশন চালু হলে রাতে মেট্রো চলাচলের সময় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরের দিন ৫ নভেম্বর উত্তরা হতে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হয়। তবে বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করছে। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আগের সময় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল।