শায়কা ইমাম শান্তা। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি । তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিন এ পড়াশোনা করেছেন। আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে দেশের জন্য সৃষ্টিশীল কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর রয়েছে “শায়কা শান্তা অ্যাসোসিয়েট” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সিইও। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার নকশা করেছেন। বর্তমানে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালুমনাই অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থাপত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি মহিলা পরিষদের আন্তর্জাতিক উপরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য। এবার শাহ সিমেন্ট নির্মাণে আমিতে স্বনামধন্য এই স্থপতিকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থাপত্য অঙ্গনে দীপ্ত পদচারণা তার । সর্বজনীনতা, দেশপ্রেম, প্রকৃতি ও মানুষের মমত্ববোধ নিয়ে স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে । আন্তরিক সদিচ্ছা, দৃঢ় মনোবল ও উৎসাহ এবং কঠোর পরিশ্রম শায়কা শান্তাকে আজকের অবস্থানে এনেছে । তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায় । কিন্তু জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবা ইমামুল হক ছিলেন সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। মা খুরশিদা বানু ছিলেন লালমাটিয়া গার্লস স্কুল এর বায়োলজি টিচার। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে শান্তা দ্বিতীয়। ভাই বোন সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ছোট বেলা থেকেই কালচারাল পরিবেশে বড় হয়েছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি গান বাজনার প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল। গান ভালো গাইতেন। গানের প্রথম হাতে খড়ি মায়ের কাছ থেকেই। বর্তমানে তিনি ছায়ানটে গুরু অসিত দের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিচ্ছেন। তাঁর পুরো পরিবার মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৯২ সালে লালমাটিয়া গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৯৪ সালে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনে । ২০০০ সালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০১ সালে তিনি প্রথমে যোগ দেন এফ ই এ লিমিটেড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে। তারপর ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হসপিটাল কনস্ট্রাকশন, এনা প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং বি টি আই লিমিটেড এ আর্কিটেক্ট হিসেবে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ২০০৮ সালে নিজেই গড়ে তোলেন “‘শায়কা শান্তা অ্যাসোসিয়েট” নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ডিজাইন কনসালটেন্সির পাশাপাশি স্বনামধন্য এই স্থপতি প্রথম স্টিল বিল্ডিং বা প্রিফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশন করেছেন।
সম্পর্কিত

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে শান্তিরক্ষী নিবাস, ঢাকা সি এম এইচ পুরাতন বিল্ডিংয়ের রেনুভেটেড ও নতুন বিল্ডিং, ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টে গলফ ক্লাব, মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে তিন বাহিনীর স্টাফ কলেজ, ভবনের ইন্টেরিয়র, ল্যান্ড স্কেপিং, ও কন্সট্রাকশন, পাঁচ টি বড় অডিটোরিয়াম, সাভার ডিওএইচএস এর সেন্ট্রাল মসজিদ, যমুনা টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ফ্যাক্টরি শেড, সাভার ক্যান্টনমেন্টে জি ও সি অফিস, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ১৩ টি মসজিদের ডিজাইন ও ৪ টির কন্সট্রাকশন , ৩ টি হসপিটাল, জলসিঁড়ি আবাসনে ৬ নাম্বার পার্ক এর ল্যান্ডস্কেপ, মুন্সীগঞ্জে হামদর্দ ইউনিভার্সিটি, চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে ফোর স্টোরিড মসজিদ, গাজীপুর মৌচাকে ড্রিম হেভেন পার্ক এন্ড রিসোর্ট, রূপগঞ্জে জল সিঁড়ি আবাসনে ভ্যাকেশন হাউস, রেস্টুরেন্ট এট জলসিঁড়ি পার্ক, মেজর মাহাদীর ডুপ্লেক্স বিল্ডিং এর ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশন, মির্জাপুরে বার্ডস গার্মেন্টসের ডিজাইন ও মাস্টার প্ল্যান, উত্তরায় ট্রিপলেক্স রেসিডেন্স, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, সিলেটের গোলাপগঞ্জে রিসোর্ট ডিজাইন ও ফুড ফ্যাক্টরি, পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান, বরিশাল বেসিক এ প্রিমিয়ার সু ফ্যাক্টরি , ফরচুন সু ফ্যাক্টরি ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশন, কুমিল্লায় অ্যাক্রিলিক ডাইং ফ্যাক্টরি, মুন্সীগঞ্জ গজারিয়ায় হামদর্দ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, কুষ্টিয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, দিনাজপুরে টি গার্ডেন, সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন তিনি।২০০১ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্বামীর নাম রেজা মোহাম্মদ সাইফুর রশিদ। তিনিও একজন স্বনামধন্য স্থপতি। এই দম্পতি এক কন্যা সন্তানের জনক জননী। মেয়ে ফারিয়া শায়কা রশিদ ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন।
তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশ্যে স্থপতি শায়কা শান্তা বলেন, স্থাপত্য একটি অনেক বড় দায়িত্ব । এখানে অল্প কাজ করার সুযোগ নেই। ডাক্তারি পেশা যেমন মানুষের জীবনকে ঘিরে, স্থাপত্য ও ঠিক একই ভাবে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য। কোনো ভুল সিদ্ধান্ত যা আমাদের সবাইকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার কারণে অনেক মেয়ে স্থপতি এক সময় হারিয়ে যায়। তাদের জন্য আমি বলবো নিজের পথটুকু নিজেই সহজ করে নিতে।