শহীদদের স্বপ্নের দেশ গড়তে চাঁদাবাজি বন্ধ করতেই হবে: ডা. শফিকুর রহমান | চ্যানেল আই অনলাইন

শহীদদের স্বপ্নের দেশ গড়তে চাঁদাবাজি বন্ধ করতেই হবে: ডা. শফিকুর রহমান | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

দখলবাজ এবং চাঁদাবাজমুক্ত দেশ গড়তে নেতাকর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চাই; যে দেশে দখলবাজি, চাঁদাবাজি চলবে না। দুর্বলরা সবল দ্বারা অত্যাচারিত হবে না। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাবে। সমতা-সাম্য কায়েম হবে দেশে। জুলাই আন্দোলনে শহীদরা যে দেশ চেয়েছিলেন তার বাস্তব নমুনা দেখাতে চাই।

সম্প্রতি গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মঞ্চের পাশেই ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, সাবেক জেলা আমির ডা. আবদুর রহীম সরকার ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ।

সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা আমির মো. আব্দুল করিম সরকার। জেলা সেক্রেটারি জহুরুল হক সরকারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফয়সাল কবীর রানা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের পক্ষে মুহিদ আহমেদ ফাহিম, গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়ারেছ, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, নজরুল ইসলাম লেবু, জামায়াত নেতা নুরুন্নবী প্রধান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ রুকুনুজ্জামান, ফয়সাল কবির রানা, শহর শাখার আমির অধ্যাপক একেএম ফেরদৌস আলম, সদর উপজেলা আমির নূরুল ইসলাম মন্ডলসহ অন্যরা। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে হামদ, নাত ও ইসলামী সংগীত পরিবেশন করা হয়।

GOVT

পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত ১৫টা বছর সারাদেশে ছিল ছোপ-ছাপ রক্ত। গাইবান্ধা ছিল লাশ আর ছোপ-ছাপ রক্তের জনপদ। কত মা কত বোন কত সন্তানের বুক যে খালি হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বহু মানুষ ধরে নিয়ে গুম করা হয়েছে। তার সঠিক সংখ্যা আল্লাহপাক কেবল জানেন।

আয়না ঘর সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে বলেন, আয়না ঘরের মানুষগুলোকে নিয়ে আমার পাশের সেলে রাখা হতো। আয়না ঘরে থাকা মানুষগুলো আমাকে বলেছেন, বহু বছর ধরে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে, অন্ধকার ঘরে রাখা হয়েছে। কিন্তু তা স্বীকার করা হয়নি। এদের কাউকে কাউকে নাটকের ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ আগেই জানান দিয়েছিল যে, ক্ষমতায় গিয়ে তারা কী করবে। কিন্তু সেটা জনগণ বুঝতে পারেনি। রাজধানীর পল্টন ময়দানে ৬ জন মানুষকে খুন করে প্রকাশ্য দিবালোকে। লাশের উপর দাঁড়িয়ে তারা নাচানাচি করেছে। সারা দুনিয়া এ ঘটনার ধিক্কার জানিয়েছে। এরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে যেভাবে দুর্নীতিতে ডুবে গেছে; জনগণ আর তাদের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না।

এরপর পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকশ সেনা অফিসার হত্যা করে বিডিআর ও সেনাবাহিনীর মনোবল ধ্বংস করে দেয়। দুটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হলেও এই হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি। পরের বছর জামায়াতকে ধরলো। কেন বেছে নিল জামায়াতে ইসলামীকে? কারণ জামায়াতের লোকজনও প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তারা কখনো দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয় না। এজন্য জামায়াতের প্রতি তাদের এতো ক্ষোভ। এই ক্ষোভে তারা জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ অনেক নেতাকর্মীকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়।

এরপর আরেক দেশপ্রেমিক শক্তি হেফাজতে ইসলামকে বেছে নিল। এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সম্মানের পাত্র তারা। ২০১৩ সালের ৫ মে আমরা জেল থেকে দেখেছি। তাদের কত মানুষ হত্যা করেছে তা আল্লাহ পাক জানেন। লাশগুলো কোথায় নিয়ে ফেলা হয়েছে কেউ জানে না।

তিনি সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম উল্লেখ করে বলেন, এই মানুষটা হুমকি দিয়েছিল ছাত্রদের এই বলে যে, বাড়াবাড়ি করলে শাপলা চত্বরের ভাগ্যবরণ করতে হবে। এই লোকটা আত্মস্বীকৃত খুনী।

আমীরে জামায়াত রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের নাম উল্লেখ করে বলেন, আপানাদের পাশের জেলায় বুকপেতে বলেছিল, ‘বুকের ভিতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। আবু সাঈদরা বলেছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজ চাই। আমরা একটি মানবিক সমাজ চাই। আমরা একটা গর্বের বাংলাদেশ চাই।

এই বাংলাদেশ গড়া হবে শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে। এই দেশ গঠন করতে হলে দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলবে না। অফিস আদালত কোর্ট কাচারি থেকে ঘুষ দুর্নীতি নির্মূল করতেই হবে।

তিনি বৈষম্যহীন দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে শহীদরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে সেই দেশের বাস্তব নমুনা দেখানো হবে। দেশ হবে চাঁদাবাজ-দখলবাজহীন। সেখানে সন্ত্রাস থাকবে না। শ্রমিকরা তার অধিকার বুঝে পাবে। সমতা আর সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে।

সাবেক ছাত্র নেতা শাফিউল ইসলামের অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পলাশবাড়ী উপজেলার জুলাই বিপ্লবে শহীদ আরিফুল ইসলামের বড় ভাই রাশিদুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রশ্রয়দানকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন। শহীদ আরিফুল ইসলামের হত্যার বিচার দাবি করেন। সম্মেলনে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন জেলা নবোচ্ছ্বাস শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা।

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল করিম সরকার বলেন, নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এ ব্যাপারে অঙ্গিকারবদ্ধ।

যা বললেন হিন্দু পুরোহিত
পলাশবাড়ী মন্দিরের পুরোহিত শ্রী মিলন কুমার ভট্ট্রাচার্য্য ঠাকুর এসেছিলেন কর্মী সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে। তিনি জানালেন, তার বড়ভাই ছিল জামায়াতের সমর্থক। এখন তিনি নিজেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করেন।

ইসকন সদস্যরা হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে জানিয়ে এই পুরোহিত বলেন, পূজা পার্বনে এরা বিভেদ সৃষ্টিকারী। আওয়ামী লীগের লোকজন নেই এখন; ফলে তাদের কোন নিরাপত্তা সংকটও নেই। এবারের পূজাতে তাদের পুলিশ প্রয়োজন হয়নি বলেও জানান মিলন ভট্টাচার্য্য।

Shoroter Joba

Scroll to Top