বার্লিন, ০৬ জুলাই – পর্তুগাল আর ফ্রান্স ছাপিয়ে লড়াইটা যেন হয়ে উঠেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর কিলিয়ান এমবাপের। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের বড় দুই তারকা নিজেদের মেলে ধরতে পারলেন না। দুজনই ছিলেন ভীষণ নিষ্প্রভ।
তাই বলে অবশ্য ম্যাচের উত্তেজনা কম ছিল না। ইউরো কাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলো ১২০ মিনিট। তাতেও হলো না গোল। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
সেই টাইব্রেকার ভাগ্যে পর্তুগালকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়েছে ফ্রান্স। এতে বিদায় হয়ে গেছে রোনালদোদের, এমবাপের ফ্রান্স নাম লিখিয়েছে ইউরো কাপের সেমিফাইনালে।
টাইব্রেকারে উসমান ডেম্বেলে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন। গোলরক্ষক উল্টো দিকে ঝাঁপ দেন। পর্তুগালের হয়ে প্রথম পেনাল্টি শট নেন রোনালদো। বাঁ দিকে নেওয়া তার শট ঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি গোলরক্ষক।
দ্বিতীয় শটে ফ্রান্সের গোল করেন ইউসুফ ফোফানা, পর্তুগালের বার্নার্দো সিলভা। তৃতীয় শটে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন জুলেস কোন্দে, পর্তুগালের হোয়াও ফেলিক্সের শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
চতুর্থ শটে গোল করেন ফ্রান্সের ব্র্যাডলি বারকোলা, পর্তুগালের নুনো মেন্দেস। ফ্রান্স পঞ্চম শট মিস করলে সুযোগ ছিল পর্তুগালের। কিন্তু পিছিয়ে পড়া পর্তুগালকে ফেরার সুযোগ দেননি থিও হার্নান্দেজ। লক্ষ্যভেদ করেন তিনি, উল্লাসে ফেটে পড়ে ফরাসি শিবির। পর্তুগাল শিবির ডুবে হতাশায়।
ফকস্পার্কস্টেডিয়নে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচের শুরুটা ছিল ঢিমেতালে। দুই দলই ছন্নছাড়া ফুটবল খেলতে থাকে। ২০ মিনিটে এসে প্রথম শট নেয় ফ্রান্স। বক্সের বাইরে থেকে থিও হার্নান্দেজের শট আটকান পর্তুগিজ গোলরক্ষক।
২৮ মিনিটে ফ্রান্সের এদোয়ার্দো কামাভিঙ্গার বক্সের বাইরে থেকে শট পোস্টের বেশ ওপর দিয়ে চলে যায়। ৪২ মিনিটে বক্সের কাছে ফ্রি কিক পায় পর্তুগাল। ব্রুনো ফার্নান্দেজের ডানপায়ের শটটিও পোস্টের নাগাল পায়নি, ওপর দিয়েই চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই এগিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে উঠে। ফলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে জমে উঠে ম্যাচ। ৫০ মিনিটে এনগোলো কন্তের অ্যাসিস্টে কিলিয়ান এমবাপের ডানপায়ের শট সহজেই ধরেন গোলরক্ষক।
৬১ মিনিটে টানা দুটি সুযোগ পায় পর্তুগাল। হোয়াও ক্যানসেলোর থ্রু বল পেনাল্টি এরিয়ায় গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ, কিন্তু ফরাসি গোলরক্ষক মাইগনান সেটি দারুণভাবে লুফে নেন। পরের মিনিটেই ক্যানসেলোর বাঁকানো শট পোস্টের বাঁ দিকের কোণা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
৬৪ মিনিটে আরেকটি আক্রমণ পর্তুগালের। এবার রাফায়েল লিয়াও বক্সের মধ্যে বল পাঠান ভিতিনহার কাছে। সামনে থেকে শট নেন ভিতিনহা, এবারও মাইগনান বাঁচান ফ্রান্সকে। তিনি বল ফেরালে সেটি গিয়েছিল রোনালদোর কাছে, পর্তুগিজ যুবরাজ ব্যাকহিলে চেষ্টা করেন। কিন্তু এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে সে চেষ্টা আটকে যায়।
৬৬ মিনিটে ফ্রান্সের কোলো মোয়ানির দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে প্রায় গোল পেয়েই যাচ্ছিলেন। কিন্তু রুবিয়েন দিয়াজের গায়ে লেগে সে শট বেরিয়ে যায় বাইরে। ৭০ মিনিটে কামাভিঙ্গা ছয় গজ বক্স থেকে শট নিলেও সেটিও পোস্টের একদম কাছ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
৭৪ মিনিটে ফ্রান্সের উসমান ডেম্বেলের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া বাঁ পায়ের শট লেগে যায় পোস্টে। ৮৬ মিনিটে রোনালদো বক্সের খুব কাছে ফ্রি কিক পেলেও সেটি আটকে যায় ফ্রান্সের মানবপ্রাচীরে।
যোগ করা সময়ে এমবাপের জোরালো শট সরাসরি ধরে ফেলেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক ডিয়েগো কস্তা। কোনো দলই গোল করতে না পারায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ।
৯৪ মিনিটে রোনালদো সুযোগ পেয়েছিলেন। ক্যানসাইসো বাইলাইনের কাছে এসে ক্রস করলে সেটি পর্তুগাল অধিনায়ক পেয়ে যান, কিন্তু তিনি সেই বল মেরে দেন ওপর দিয়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ হতেই (১০৫ মিনিটে) এমবাপেকে তুলে নেন কোচ। বদলি হিসেবে নামেন ব্র্যাডলি বারকোলা। ১১১ মিনিটে উসমান ডেম্বেলে বাঁ দিক থেকে বক্সের কাছাকাছি এসে শট নিলে সেটি ওপর দিয়ে চলে যায়।
শেষ মিনিটে এসে পর্তুগাল দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে গোল পায়নি। বার্নার্দো সিলভা বক্সের ডান দিক থেকে পাস দিয়েছিলেন মাঝে দাঁড়ানো নুনো মেন্দেসকে। মেন্দেস শটও নেন, কিন্তু সেটি সরাসরি গোলরক্ষক বরাবর। ১২০ মিনিটের খেলা শেষ হয় গোলশূন্যভাবে, ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ০৬ জুলাই ২০২৪