রোজায় খাবারে সংযমী হন

রোজায় খাবারে সংযমী হন

আইরিন ইসলাম

রোজায় সাধারণত দুবার খাওয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশের প্রচলন হল মজাদার মুখরোচক ইফতারি ও একটু বেশি রাত করে রাতের খাবার খাওয়া। অনেকেই ইফতারি ও রাতের ভারী খাবারের পর সেহেরিতে খুব হালকা খাবার খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ রাত ১১টা বা সাড়ে ১১টার মধ্যে খেয়ে, সেহেরিটা পুরোপুরি এড়িয়ে যান। যদিও কিছু কিছু মুসলিম দেশে ভারী খাবার খাওয়া হয়ে থাকে ইফতার ও সেহেরিতে। মাঝে খাবার বলতে হালকা নাশতা বা সুপ।

সুস্বাস্থ্যের জন্য কোন রীতিটি মানা উচিত? আর ২৪ ঘণ্টার দিনে মাত্র দুবারের খাওয়া থেকে কীভাবে সুষম আহার নিশ্চিত করা যায় এক মাসের রমজানে? খুব সহজ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে রোজার মাসেও পরিমিত সুষম খাবারের মাধ্যমে শরীরের প্রতিদিনের পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব।

এবারের রোজা প্রচণ্ড গরমে। এইসময়ে স্বাভাবিকভাবেই দিন বড়। উষ্ণ ও আর্দ্র এই আবহাওয়ায় সারাদিনে রোজাদারের শরীরে খুব সহজেই পানিস্বল্পতার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। তাই সারাদিনের পানির চাহিদা, ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানির অভাব পূরণ করার সময়টুকু কেবল ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত, যার বেশ কিছুটা সময় আমাদের কেটে যায় ঘুমে।

এ জন্য রোজা ভাঙার পরপরই আমাদের খাবারের থেকেও বেশি মনোযোগী হতে হবে পানীয়র দিকে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, কোলাজাতীয় পানীয় এবং চা বা কফি যেন এই হিসাবের মধ্যে না আসে। জুন- জুলাইয়ের এই গরমে পানির পাশাপাশি ঘরে তৈরি লেবু বা ফলের শরবত, দুধ, লাচ্ছি, সুপ এগুলো ইফতার এবং সন্ধ্যার পরেও চলতে পারে অনায়াসে।

সারাদিনের অনাহারের পর বারবার পানীয় ধরনের কিছু খেতে ইচ্ছে না হলে বেছে নিতে পারেন টমেটো, শসা, লেটুস দিয়ে তৈরি সালাদ বা ফলের সালাদ। এগুলো শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি দেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিরও জোগান দেয়। আর এসব সবজি ও ফলে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরে পানির অভাব পূরণেও ভীষণভাবে কার্যকরী।

মনে রাখা দরকার, কোলা, কফি, চা এবং অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় পানীয় শরীরকে আরও বেশি পানিশূন্য করে তোলে। তাই দোকানের পানীয়কে এড়িয়ে ঘরের তৈরি পানীয়, যেমন: পুদিনা- লেবুর শরবত, বেলের শরবত, তোকমা বা কাঁচা আমের শরবত, তেঁতুলের শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

সেহেরিতে অনেকেই সামান্য পরিমাণে খাবার গ্রহণ করে থাকেন। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে পরিপূর্ণভাবে সেহেরি খুব কম লোকই করেন। যা স্বাস্থ্যের জন্য সাংঘাতিক ক্ষতিকর। সারাদিনের শক্তি ও পুষ্টির চালিকাই হল সেহেরির খাবার।

সেহেরিতে তাই এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত যেগুলো ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দিনের অনেকটা সময়জুড়ে যেন আপনাকে পূর্ণতার বোধ দেয়। এজন্য প্রোটিন ও আঁশমুক্ত কার্বোহাইড্রেট সেহেরির মেন্যুতে অবশ্য থাকা কর্তব্য। ডিম, পনির, পিনাট বাটার, দানাজাতীয় খাবার যেমন রাজমা- বিন বা শিমের দানা, মাংস এগুলো খাওয়া যেতে পারে সেহেরিতে।

কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড, ওটস, মুজলি এসব খাওয়া যেতে পারে।

খাওয়ার পর আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি এসব ডেজার্টের পরিবর্তে খেলে পূর্ণতার অনুভুতি অনেকটা সময় পর্যন্ত রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিসের রোগী না হলে আম, কাঁঠাল, কলা এগুলোও সেহেরিতে খাওয়া চলে অনায়াসে। তবে মিষ্টি, গুড়- এসব সেহেরিতে কম পরিমাণে খাওয়াই শরীরের জন্য উপকারী।

ইফতারিতে টেবিলজুড়ে খাবার থাকাটাই আমাদের দেশের রেওয়াজ। যার অধিকাংশই তেলে ভাজা ও মিষ্টিজাতীয় খাবার। সারাদিনের অনাহারের পর উদোরপূর্তি বা ক্ষুধা নিবৃত্তির দিকেই নজর থাকে বেশি। তাই পুষ্টির কথা ভুলে মুখরোচক খাবারের প্রতিই আগ্রহী হয়ে উঠি আমরা।

তবে একটু সচেতন হয়ে মেন্যু পরিকল্পনা করলেই মজাদার অথচ পুষ্টিকর খাবারে ভরাতে পারি আমাদের ইফতারের টেবিল।

যেমন তেলে ভাজা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে গ্রিল বা বেইকড খাবার রাখা যেতে পারে। প্রতিদিনের ইফতারে জিলাপি না এনে ফ্রুট সালাদ বা ফলের পাই বা ঘরে তৈরি ফ্রুট কেক বা কাস্টার্ড খাওয়া যায়। তেলে ভাজা যদি খেতেই হয় তবে জলপাই বা সূর্যমুখী তেলে ভাজা খাবার খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।

আমাদের সচরাচর ইফতারির খাবারগুলোর মধ্যে কাঁচাছোলা, রান্না করা ছোলা এগুলো খুব ভালো স্বাস্থ্যে জন্য।

ছোলা প্রোটিনের খুব ভালো একটা উৎস এবং ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে আঁশও পাওয়া যায়। এ ছাড়া খেজুর, দইবড়া, শসা, এগুলোও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। খেজুরে আয়রন ও ফাইবারের পরিমাণ অনেক। পাশাপাশি খুব তাড়াতাড়ি এনার্জি দিতেও খেজুরের বিকল্প নেই। দইবড়ার দই শরীরকে ঠান্ডা করে আর বড়াটা যেহেতু মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে তৈরি করা হয় ফলে প্রোটিনের একটা ভালো উৎস হিসেবেও দইবড়া যথেষ্ট উপকারী একটা খাবার।

সেহেরিতে পেট ভরে খাওয়াটা শরীরের জন্য যেহেতু উপকারী তাই ভরপেটে ইফতারের পর রাতের খাবারটা হালকা খাওয়াই শ্রেয়। যেমন সুপ, হাতে বেলা রুটি, সবজি- এসব খাওয়া যেতে পারে। দুধ প্রোটিনের খুব ভালো উৎস, প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায় এক গ্লাস দুধে। ইফতার ও সেহেরির মাঝে রাতের খাবারে এক গ্লাস দুধ থাকতে পারে সঙ্গে স্যান্ডউইচ।

মনে রাখা দরকার, আমাদের শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া বিকেলের পর থেকে ধীর হতে শুরু করে। ইফতারের ভারী খাবারের পর তাই রাতের খাবার হালকা অথচ পুষ্টিকর হওয়াই ভালো।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Scroll to Top