রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে জুলাই সনদের খসড়া। চূড়ান্ত খসড়ায় সনদের পটভূমি, রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি বিষয় এবং বাস্তবায়নের ৮টি অঙ্গীকারনামা রয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে তা পাঠানো হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে জাতীয় সনদকে বিশেষ মর্যাদা ও আইনি ভিত্তি দেওয়ার কথা আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতামত গ্রহণ এবং কিছু শব্দ ও ভাষাগত সংযোজন-বিয়োজন শেষে সনদের চূড়ান্ত খসড়াটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠায় কমিশন।
জানা গেছে, জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রথম ভাগে জুলাই সনদের পটভূমি, সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং কমিশনের কার্যক্রমের বিষয়ে বর্ণনা করা আছে।
দ্বিতীয় ভাগে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো এবং সর্বশেষ ভাগে রয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা, যেখানে ৯টি ধারায় অঙ্গীকারগুলো উল্লেখ আছে। জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামাসমূহ:
১) জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’র দলিল হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবো।
২) এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে, এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছি বিধায় এই সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করবো এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/ প্রস্তাব/ সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।
৩) এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নরে চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের উপর ন্যস্ত থাকবে।
৪) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
৫) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/ সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করবো।
৬) আমরা ঐকমত্যে স্থির হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত; ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হবে।
৭) আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহিদ পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
৮) আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর যেসব প্রস্তাব/ সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনোপ্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।