দুই বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। এখনও এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। এ নিয়ে কোনো সমঝোতার আশাও দেখা যাচ্ছে না এখনই। এই দুই বছরে রাশিয়ার অর্জন যেমন রয়েছে তেমনভাবে রয়েছে ক্ষত।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, একজন রাশিয়ান তরুণ বলেছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে গত ২ বছরে রাশিয়ায় যা কিছু ঘটেছে তা আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে। এটি ছিল নাটক, রক্তপাত এবং ট্র্যাজেডির একটি উদাহরণ। তিনি বলেন, কীভাবে এবং কখন এটি শেষ হবে সেই ভবিষ্যদ্বাণী আমি করতে পারি না।
রাশিয়ার হামলা ইউক্রেনে মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে এনেছে। রাশিয়ান সেনাবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এতে। এই সময় উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা হল: ইউক্রেন রাশিয়ার শহরগুলোতে গোলাবর্ষণ করেছে, কয়েক লক্ষ রাশিয়ান তরুণকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা, বিপুল পরিমাণ সৈন্যর মৃত্যুবরণ, ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্যদের বিদ্রোহ এবং তাদের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি। সবশেষে যুক্ত হয়েছে কারাগারে পুতিনের কড়া সমালোচক নাভালনির মৃত্যু।
অর্জনের ঝুড়িতে আছে- ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চল দখল, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের ইউক্রেন থেকে পিছু হটা, নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও অর্থনীতিকে সচল রাখা, মিত্র দেশের সমর্থন আদায়।
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল থেকে ২০২২ সালে ডনবাসে প্রথম হামলা চালানো। ২০২০ সালে আলেক্সি নাভালনিকে এজেন্ট দিয়ে বিষ প্রয়োগ এবং ২০২১ সালে জেলে বন্দি। সব ঘটনারই সুত্রপাত অনেক আগ থেকেই।
সাবেক ন্যাটো প্রধান লর্ড রবার্টসন বলেছেন, আমি যে পুতিনের সাথে দেখা করেছি, তার সাথে বর্তমান পুতিন খুব আলাদা। পুতিন আমাকে বলেছিলেন, ইউক্রেন একটি সার্বভৌম এবং স্বাধীন রাষ্ট্র যারা নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। এখন তিনিই আবার বলছেন, ইউক্রেন রাষ্ট্র নয়।
লর্ড রবার্টসন বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন একসময় বিশ্বের দ্বিতীয় পরাশক্তি হিসেবে স্বীকৃত ছিল, কিন্তু রাশিয়া আজ তা দাবি করতে পারে না। আমি মনে করি, অহংকার পুতিনকে গ্রাস করেছে। আমি মনে করি অহংকারের কারণে যেই পুতিন আগে ন্যাটোকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন সেই তিনি এখন ন্যাটোকে একটি বিশাল হুমকি হিসেবে দেখেন। তবে রাশিয়া বরাবরই দাবি করে আসছে, পূর্ব দিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়ার নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে এবং যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছে।
যুদ্ধের দুই বছর ধরে ভ্লাদিমির পুতিন বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন এবং দেশে ও বিদেশে তার শত্রুদের পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি আমেরিকা, ন্যাটো এবং ইইউ-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে পশ্চিমারা যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করছে কিন্তু এটি আসলে রাশিয়ার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।