এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূল রাজ্য বা সুইং স্টেটগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লোরিডা, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, ওহিও এবং অ্যারিজোনার মতো মূল রাজ্যগুলোর ভোটের ওপর নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে। কারণ এই রাজ্যগুলোর ভোটাররা কোন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থন করে না তাদের পছন্দ প্রার্থীদের প্রচারণার সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে থাকে।
সুইং স্টেটগুলো হল সেই রাজ্যগুলো যেখানে ভোটারের সমর্থন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে বিভক্ত থাকে। এসব রাজ্যে ছোটখাটো ভোটের ব্যবধানেই নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন হতে পারে। এজন্য প্রার্থীরা এই রাজ্যগুলোতে প্রচারণার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন এবং নির্বাচনী কৌশল তৈরি করেন।
তাই বরাবরের মতো ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও সুইং স্টেটগুলোর ভোটারদের ভোট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন-
-
ভোটার পরিবর্তন: ফ্লোরিডা এবং অ্যারিজোনায় তরুণ ও প্রবাসী ভোটারদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাবনা বেড়েছে। এই নতুন ভোটারদের সমস্যা ও আকাঙ্ক্ষা বোঝা প্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
-
শ্রমিক ভোটার: পেনসিলভেনিয়া ও মিশিগানে শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয় পক্ষকেই কাজ করতে হবে।অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং কর্মসংস্থান সুযোগগুলোর ওপর ভোটারদের মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ।
-
অর্থনৈতিক ইস্যু: ওহিওতে অর্থনৈতিক উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোটাররা এখন নিজেদের সুবিধা ও কর্মসংস্থানের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন, যা ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
-
প্রচার কৌশল: প্রার্থীরা সুইং স্টেটগুলোতে স্থানীয় সমস্যা এবং সামাজিক ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে কৌশল অবলম্বন করছে, যেমন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ইস্যু নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুইং স্টেটগুলোর পরিস্থিতি
ফ্লোরিডা
ফ্লোরিডা রাষ্ট্রটি সুইং স্টেট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। এখানে ২৯ ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে, যা যেকোন প্রার্থীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালের নির্বাচনে, ফ্লোরিডা ট্রাম্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় ছিল। এই রাজ্যের ভোটারদের মধ্যে ল্যাটিনো সম্প্রদায়ের বৃদ্ধি এবং বৃদ্ধ বয়স্ক ভোটারদের সংখ্যা, রাজ্যের ভোটের প্যাটার্নে নতুন পরিবর্তন এনে দিতে পারে।প্রার্থী হিসেবে, রিপাবলিকান দলের প্রার্থীকে ফ্লোরিডার কঠোর অভিবাসন নীতির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে, কারণ এটি ল্যাটিনো ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সংস্কার অন্যতম প্রধান ইস্যু।
পেনসিলভেনিয়া
পেনসিলভেনিয়া রাজ্যটির ২০ ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় এখানেও বড় ধরনের চমক ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে, বাইডেন এই রাজ্যে সফলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পেনসিলভেনিয়ার অগ্রসর শহরগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি ও শিল্পনির্ভর অঞ্চলগুলোর অর্থনৈতিক সমস্যা ভোটের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পেনসিলভেনিয়াতে, রিপাবলিকান প্রার্থীদের কৃষকদের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করা দরকার, যাতে তারা কৃষি উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দেয়। ডেমোক্র্যাটদের জন্য, স্থানীয় শিল্প পুনরুজ্জীবন এবং পরিবেশগত নীতিগুলোর ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
মিশিগান
মিশিগানও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য, যেখানে ১৬ ইলেকটোরাল ভোট আছে। এখানে ভোটারদের মধ্যে কৃষি, শ্রম এবং গাড়ির শিল্পের অবস্থা উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়ে মিশিগান গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু ২০২০ সালে বাইডেন এই রাজ্যে সফলভাবে জয়লাভ করেন। মিশিগানের ভোটাররা মূলত অর্থনৈতিক সংকট, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা সংস্কারের দিকে নজর রাখছেন। তাই এই রাজ্যে রিপাবলিকানদের জন্য স্থানীয় শিল্পের জন্য সহায়তা এবং নতুন চাকরির সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আর ডেমোক্র্যাটদের জন্য পরিবেশবান্ধব নীতি ও শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।
ওহিও
ওহিওতে আছে ১৮ ইলেকটোরাল ভোট এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত সুইং স্টেটগুলোর মধ্যে একটি। এই রাজ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারের ভোটারদের সমর্থনই নির্ধারণ করে নির্বাচনের ফলাফল। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়ে ওহিওর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য, কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে বাইডেনের প্রভাবও বেড়েছিল। ওহিওতে প্রার্থীদের প্রচারণা কৌশল গড়ে তুলতে স্থানীয় ব্যবসা এবং চাকরির সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কৃষি এবং শিল্প খাতের উন্নতির জন্য একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা নির্বাচনের সময় ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
অ্যারিজোনা
অ্যারিজোনা রাজ্যে ১১ ইলেকটোরাল ভোট আছে এবং এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি একটি বড় সুইং স্টেট হয়ে উঠেছে। ল্যাটিনো ভোটারদের সংখ্যা এখানে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ২০২০ সালে বাইডেনের জন্য বিজয় ছিল এই রাজ্যে একটি বড় চমক। এখানে প্রার্থীদের প্রচারণা কৌশলগুলো অবশ্যই অভিবাসন নীতি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক হতে হবে। রিপাবলিকান প্রার্থীদেরকে ল্যাটিনো সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের সমর্থন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হতে হবে, আর ডেমোক্র্যাটদের সুশাসন ও পরিবেশবান্ধব নীতির ওপর জোর দেয়া প্রয়োজন।
প্রতিটি সুইং স্টেটের ভোটারদের চাহিদা এবং উদ্বেগগুলো বুঝতে পারলে, প্রার্থীরা তাদের জন্য আরও কার্যকর কৌশল তৈরি করতে সক্ষম হবে। আসন্ন নির্বাচনে এই রাজ্যগুলোর ফলাফল রাজনৈতিক পরিবেশে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।