যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রতিযোগিতাকে নতুন রূপ দিয়েছে এআই | চ্যানেল আই অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রতিযোগিতাকে নতুন রূপ দিয়েছে এআই | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বিগ ডেটা, এবং প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রযুক্তিগুলোর অভূতপূর্ব ব্যবহারের ফলে নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রার্থীদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে নতুন রূপ পেয়েছে প্রতিযোগিতা। যে প্রার্থী যত বেশি প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছেন সে ততই যেন এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিযোগিতায়।

দ্যা গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রচারণার জন্য ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকা বিশাল পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করে ভোটারদের আচরণ বিশ্লেষণ করেছিল। তারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রচারণার কৌশল তৈরি করে। যা ট্রাম্পের জয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

এআই এবং অন্যান্য প্রযুক্তির সাহায্যে ভোটারদের মনোভাব বিশ্লেষণ, টার্গেটেড বিজ্ঞাপন তৈরি এবং ফলাফল পূর্বাভাসের কাজগুলো সহজতর হচ্ছে। সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে কন্টেন্ট কাস্টমাইজ করা হচ্ছে যা প্রার্থীদের বিশেষ লক্ষভিত্তিক বার্তা পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে। তবে গোপনীয়তা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে, যা প্রযুক্তির এই ব্যবহারে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

রাজনৈতিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে এআই ও বিগ ডেটা

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বিভিন্ন স্তরে করা হচ্ছে। একটি প্রধান ব্যবহারের ক্ষেত্র হলো বিশাল ডেটা সেট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা।

GOVT

বিগ ডেটা ও কাস্টমাইজড ভোটার প্রোফাইল:  এআই এবং বিগ ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে লাখ লাখ ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করে নির্বাচন প্রচারণা দলগুলো ভোটারদের রাজনৈতিক মনোভাব বুঝতে পারছে। ডেটা মডেলিংয়ের মাধ্যমে ভোটারদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল তৈরি করা সম্ভব এবং এটি নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক সময়ে পিউ রিসার্চ সেন্টার এবং ব্রোকিংস ইন্সটিটিউশনে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভোটার প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা দলগুলো ভোটারদের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা পাঠাতে সক্ষম।

অনুভূতি বিশ্লেষণ ও সোশ্যাল মিডিয়া: এআই ভিত্তিক সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস টুলগুলো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভোটারদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করছে। এমআইটি টেকনোলোজি রিভিউর গবেষণায় দেখা গেছে, এই টুলগুলো ভোটারদের মানসিকতা এবং অনুভূতি বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, করোনাভাইরাস মহামারী এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে গত নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় যা থেকে প্রার্থীরা ইস্যুগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন।

নির্দিষ্ট গ্রুপের জন্য টার্গেটেড বিজ্ঞাপন: এআইয়ের সাহায্যে প্রার্থীরা বিভিন্ন শ্রেণি বা ভৌগলিক এলাকাভিত্তিক টার্গেটেড বিজ্ঞাপন তৈরি করছেন। এতে করে বিভিন্ন ভোটারদের জন্য আলাদা আলাদা বার্তা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে যা প্রচারের প্রভাব বাড়াচ্ছে। এই কৌশলগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের গবেষকরা। যেখানে দেখা গেছে, টার্গেটেড বিজ্ঞাপন মূলত বিভিন্ন ভোটারকে তাদের মনোভাব অনুযায়ী আকৃষ্ট করতে বিশেষভাবে সহায়ক।

ভবিষ্যদ্বাণী ও সম্ভাবনা বিশ্লেষণ:  বিগ ডেটার সাহায্যে বিভিন্ন মডেল ও অ্যালগরিদম ব্যবহার করে নির্বাচনী ফলাফল এবং ভোটারদের প্রবণতা ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হচ্ছে। সেই অনুযায়ী চালাচ্ছেন প্রচারণা। অনেক প্রচারণা দল এখন এমন অ্যালগরিদম ব্যবহার করছে যা নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে।

সামাজিক মিডিয়ার প্রচারণায় ভূমিকা

সামাজিক মিডিয়ার ভূমিকা নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

লাইভ স্ট্রিমিং ও সরাসরি যোগাযোগ: প্রার্থীরা তাদের সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন। এটি তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াচ্ছে এবং নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে এই কৌশল বেশ কার্যকর।

ভাইরাল কন্টেন্ট ও মেমে কালচার: নির্বাচনী প্রচারণায় ছোট ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। এআই অ্যালগরিদমের মাধ্যমে প্রার্থীরা এমন কন্টেন্ট তৈরি করছেন যা ভোটারদের দ্রুত আকর্ষণ করে। নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই কৌশল দ্রুত ভোটারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।

Chokroanimation

Scroll to Top