এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
চলতি বছর মে মাসের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ধীর হয়েছে। বুধবার (১৯ নভেম্বর) প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা যায়, অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে, যা সরকারের জন্য আগামী সপ্তাহের বার্ষিক বাজেট ঘোষণা আগে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) ডিসেম্বরে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও বাড়িয়েছে।
ইয়াহু ফিনান্স এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) জানায়, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, অক্টোবরে তা কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ২০২৪ সালের জানুয়ারির পর যৌথভাবে সর্বোচ্চ পতন। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ এবং বিওই উভয়ের পূর্বাভাসের সঙ্গে এই ফল মিলে গেছে।
ডেটা প্রকাশের পর ব্রিটিশ পাউন্ড সামান্য দুর্বল হয়, দুই বছরের গিল্ট বন্ডের ফলন কমে আসে এবং ২০২৬ সালের জন্য বাজারে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়।
ডব্লিউপিআই স্ট্রাটেজির প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন বেক বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন টানা নিম্নমুখী পথেই রয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল, আর আগামী সপ্তাহের বাজেটে বড় ধরনের আর্থিক সংকোচন আসতে পারে এসব মিলিয়ে ডিসেম্বরে বিওই সুদের হার কমানোর মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে বিওই তাদের ত্রৈমাসিক হারে সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে। এর আগে অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস বলেন, তিনি বাজেটে এমন কোনো কর বা ব্যয় ঘোষণায় যাবেন না যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
বুধবারের ডেটা প্রকাশের পর রিভস বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় এখনো দেশের পরিবারগুলোর জন্য বড় বোঝা। তাই আগামী সপ্তাহের বাজেটে আমি লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নেব, যাতে মূল্যস্ফীতি আরও কমে এবং মানুষ স্বস্তি পায়।
কিছু অর্থনীতিবিদের ধারণা, গত বছরের বাজেটে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, নিয়োগদাতাদের ওপর কর বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শুল্ক এসব পদক্ষেপ যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতিতে ১ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করেছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এখনও ব্রিটেনেই মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ।
বিওই-এর সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, অন্তত ২০২৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার উপরে থাকবে। বিশেষ করে ধীর উৎপাদনশীলতার তুলনায় মজুরি দ্রুত বাড়তে থাকায় এই চাপ আরও বাড়ছে।
বিওই সার্ভিস সেক্টরের মূল্যস্ফীতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে, কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ মূল্যচাপের ইঙ্গিত দেয়। অক্টোবরে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
ওএনএস জানায়, গৃহস্থালির বিদ্যুৎ ও গরমের বিল কমা এবং হোটেল ভাড়ায় পতন এই দুটিই অক্টোবরের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমাতে বড় ভূমিকা রাখে।
অস্থির খাদ্য, জ্বালানি, অ্যালকোহল ও তামাক বাদ দিয়ে গণনা করা কোর সিপিআই কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যা প্রত্যাশার সঙ্গে মিলেছে।
তবে খাদ্য ও পানীয়ের মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে অক্টোবরে হয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। বিওই-এর ধারণা, ডিসেম্বর নাগাদ এই হার আরও বাড়তে পারে এবং এটি সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এ দিন প্রকাশিত অন্য একটি ওএনএস ডেটায় দেখা যায়, কারখানা গেট মূল্য বা উৎপাদক মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
আগামী ১৮ ডিসেম্বরের বৈঠকে বিওই সুদ কমালেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না, তবে এটি একেবারে নিশ্চিতও নয়। নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি ৫-৪ ভোটে সুদ কমানো থেকে বিরত থাকে।
তখন গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি ইঙ্গিত দেন, বছরের বাকি সময়ের ডেটা যদি মূল্যচাপ কমার আরও স্পষ্ট প্রমাণ দেয়, তাহলে তিনি সুদ কমানোর পক্ষে ভোট দিতে পারেন। তবে প্রধান অর্থনীতিবিদ হিউ পিল মঙ্গলবার বলেন, এখনও উচ্চ মজুরি প্রবৃদ্ধি থাকায় নিকট ভবিষ্যতের ডেটা তার অবস্থান বদলাবে বলে মনে হয় না।
আইএনজি অর্থনীতিবিদ জেমস স্মিথ বলেন, সার্ভিস সেক্টরে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি কমেছে ঠিকই, তবে এতে বিমান ভাড়ার অস্থিরতা বড় ভূমিকা রেখেছে যা নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ গুরুত্ব নাও দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, হক নীতিনির্ধারকরা রেস্তোরাঁ ও ক্যাফের দাম বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করতে পারেন, কারণ এটি সার্ভিস সেক্টরের স্থায়ী চাপের অন্যতম সূচক। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যচাপই এর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।







