ঢাকা, ১৫ আগস্ট – দীর্ঘ ২৭ দিন বন্ধ থাকার পর আগামী শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে মেট্রোরেল চালানোর কথা থাকলেও সে কথা রাখতে পারছে না মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ফলে আগামী শনিবার থেকেও মেট্রোরেলের যাত্রী পরিষেবা বন্ধ থাকছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার গত ১১ আগস্ট ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) আওতায় পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণাধীন এমআরটি লাইন-৬ এর মেট্রো ট্রেন চলাচল প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাতদিনের মধ্যে পুনরায় চালু করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। অনিবার্য কারণবশত মেট্রোরেল পুনরায় চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও শুরু করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাত্রীবিহীন পরিচালন পরীক্ষণ শেষে মিরপুর-১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশন ব্যতীত অপর ১৪টি স্টেশন সমন্বয়ে মেট্রোরেল পুনরায় চালুর নিমিত্তে মেট্রোরেল সিস্টেম ও মেট্রো ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। এ প্রেক্ষাপটে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেট্রোরেল পুনরায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য ডিএমটিসিএল আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
এদিকে, অবিচার ও বৈষম্য দূরীকরণে ছয় দফা দাবি আদায়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সাতশরও বেশি কর্মচারী। জানা গেছে, এখনও তারা কর্মবিরতিতে আছেন। ফলে ট্রেন চালানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে অফিসে থাকলেও কাজ করছেন না।
তাদের দাবিগুলো হলো–
*সব গ্রেডে একই রকম বেতন কাঠামো, যা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর ২.৩ গুণ হারে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ দিতে হবে;
*চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে বকেয়াসহ সেন্ট্রাল প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) সুবিধা দিতে হবে;
*অন্যান্য সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ও অন্যান্য দেশের মেট্রোর পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করে পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু এবং সব ধরনের ভাতা সম্বলিত সার্ভিস রুলস দ্রুত সময়ের মধ্যে দিতে হবে।
*শিক্ষানবিশকাল শেষে স্থায়ীকরণ করতে হবে;
*স্টেশন ও ডিপোসহ সব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
*কর্মক্ষেত্রে স্বৈরাচারী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক আচরণ এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যাবে না।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় মেট্রো লাইনের নিচের পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই ট্রেন ছুটে যায়। পরে জননিরাপত্তার স্বার্থে ওই দিন বিকেল সাড়ে ৫টার পর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরদিন ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। তারা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, মূল স্টেশনে যাত্রী প্রবেশের পাঞ্চ মেশিনসহ সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওইদিন পল্লবী ও মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশনেও হামলা হয়।
২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ পর্যন্ত সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর চালু করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ যাত্রী যাতায়াত করতেন।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ১৫ আগস্ট ২০২৪