মেট্রোরেলের পিলার ঘেঁষে বিলবোর্ড: যান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি! | চ্যানেল আই অনলাইন

মেট্রোরেলের পিলার ঘেঁষে বিলবোর্ড: যান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি! | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

মেট্রোরেলের পিলার ঘেঁষে হঠাৎই বিলবোর্ডের কাজ শুরু হয়েছে ঢাকা মহানগরীতে। রাজধানীর কাওরানবাজার মোড় থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত পথের সবগুলো পিলারের দুই পাশে বিলবোর্ড লাগানোরকাজ চলছে। কিন্তু মেট্রোরেল পিলারের অংশের সঙ্গে শুধুই গাছ থাকার কথা ছিল। হঠাৎ করেই তা পরিবর্তন করা হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন নীচু (লো হাইট) বিলবোর্ডগুলোর নিয়ন আলো গাড়ির চালকদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কর্তৃপক্ষকে নাগরিক নিরাপত্তার কথা সবার আগে ভাবতে হবে। জ্ঞানের ঘাটতি রেখে শুধু লাভের আশা করা ভুল সিদ্ধান্ত।

জানা গেছে, মতিঝিল থেকে বাংলামোটর অংশে মেট্রোরেলের পিলারে বিলবোর্ডের কাজ করার অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। আর এজন্য বছরে এক কোটি টাকা রাজস্ব পাবে তারা।

বিলবোর্ডগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হচ্ছে কোথাও কোথাও পিলার ঘেঁষে, আবার কোথাও সামান্য জায়গা রাখা হয়েছে। আর কংক্রিটের ঢালাই করে শক্তপোক্ত একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। যা নষ্ট করছে শহরে নান্দনিকতা।

চলতি বছরের ২ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে ঢাকার মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা গ্রাফিতির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী স্বৈরশাসনের নিপীড়ন, জনগণের টানা প্রতিরোধ এবং শেখ হাসিনার পতন ঘটানো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস তুলে ধরে ঢাকার মেট্রোরেলের পিলারে এসব গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে।

এরআগে ২০২৩ সালে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ বাস্তবায়ন করে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন স্থাপনায় সৌন্দর্যহানির হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পরে ওই বছরের ২২ আগস্ট মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর দায়ে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

যদিও মেট্রোরেলের মূল নকশা ও কাঠামো মেনে পিলারে পোস্টার বা গ্রাফিটি করা হয়েছে কি না তার উত্তর কারো কাছে নেই।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। মেট্রো রেলের নিচের এই অংশের গাছ লাগানো ও দেখভালের দায়িত্বও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। তবে তারা বলছে মেট্রোরেলের দুই অংশের দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনের। আর এসব জায়গায় কোন স্থাপনা করতে গেলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের কেউ আমাকে সদুত্তর দিতে পারেননি।’

বিষয়টি নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে এমন বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। মেট্রোরেলের পিলারে কৌশলগতভাবে স্থাপিত এই বিজ্ঞাপনগুলো যাত্রী ও পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা দীর্ঘ সময় ধরে ব্র্যান্ডের বার্তা চোখে পড়ে। বড় আকারের ডিসপ্লেতে পিলারগুলো ঢেকে দেওয়া হলে বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের ব্র্যান্ড, পণ্য এবং সেবাগুলোকে বৈচিত্র্যময় নগরবাসীদের সামনে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, ফলে ব্র্যান্ডের দৃশ্যমানতা ও স্মরণযোগ্যতা বেশি হয়।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদ ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন এমন নগর পরিকল্পনাবিদ ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন এমন সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক চ্যানেল আই অনলাইন বলেন, ‘‘নগরের রাস্তাগুলোতে বিলবোর্ডের বিজ্ঞপন নতুন নয়, দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে এগুলো করা হয়। অতীতেও আমরা দেখেছি বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপনের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ায় সেগুলো খুলতে হয়েছে। মেট্রোরেলের পিলারে সাধারণত নীচু (লো হাইট)-এর বিলবোর্ড করা হয়। এগুলোর নিয়ন আলো খুবই বিপদজনক। বিশেষ করে যখন বিজ্ঞপন পরিবর্তন হয় আলোর ঝলকানি ও চাকচিক্য বেড়ে যায়। যা গাড়ি চালকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই আলোগুলো গাড়ি চালকদের চোখে দ্রুত ঝলকানির সৃষ্টি করে, যা অনিরাপদ।’’

এই যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সিটি করপোরেশন অর্থাৎ কর্তৃপক্ষকে নাগরিকে নিরাপত্তার আদর্শ হওয়ার কথা। কিন্তু তারা নিজেদের কমাশিয়্যাল ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে জ্ঞানের ঘাটতি রেখে বিজ্ঞান বর্হিভূত এমন কাজ করে যা নগরবাসীর স্বস্তির কারণ না হয়ে বিপদের কারণ হয়।’

যদিও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে মেট্রোরেলের পিলার গুলোতে বিজ্ঞাপন বোর্ডের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো কারা সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলেন নি।

এমনকি মেট্রোর পিলারে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডের বিষয়েও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম ও উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাতে সাড়া দেননি।

তবে এক কর্মকর্তা জানালেন, মেট্রোরেলের পিলারে বিলবোর্ড স্থাপনে বছরে এক কোটি টাকা রাজস্ব পাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

Scroll to Top