এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
মৃত্যুর পরেও কি আবার জীবনে ফিরে আসা সম্ভব? এই প্রশ্ন যুগের পর যুগ ধরে মানুষের কৌতূহল ও বিতর্কের বিষয় হয়ে আছে। জার্মানির স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান টুমরো.বাইও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহসী এক উদ্যোগ নিয়েছে। তারা মৃত্যুর পর দেহকে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তবে এই সুযোগ পেতে গ্রাহকদের খরচ করতে হবে ২ লাখ ডলার।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
কীভাবে তা সম্ভব, এবিষয়ে স্টার্টআপটি জানিয়েছে, ‘ক্রায়োনিক্স’ হল একটি পদ্ধতি, যেখানে মৃত্যুর পর দেহকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় -১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করা হয়। দেহের তরল পদার্থগুলোকে ক্রায়োপ্রোটেক্টিভ এজেন্ট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাতে বরফ স্ফটিক গঠন করে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সংরক্ষণের পরে দেহকে এমন একটি অবস্থায় রাখা হয়, যেখানে এটি বহু দশক বা শতাব্দী ধরে অবিকৃত থাকতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এমিল কেন্জিওরা, যিনি একজন প্রাক্তন ক্যান্সার গবেষক, এই উদ্যোগকে যুগান্তকারী বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “একসময় অঙ্গ প্রতিস্থাপনকেও অসম্ভব মনে করা হতো, কিন্তু এখন তা দৈনন্দিন বাস্তব।”

এ পর্যন্ত টুমরো.বাইও তিন থেকে চারজন গ্রাহকের দেহ এবং পাঁচটি পোষা প্রাণী সংরক্ষণ করেছে। আরও ৭০০ জন এই প্রক্রিয়ার জন্য সাইন আপ করেছেন।

যদিও এই ধারণা বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনো বিতর্কিত। লন্ডনের কিংস কলেজের নিউরোসায়েন্স অধ্যাপক ক্লাইভ কোয়েন বলেন, “মানুষের জটিল মস্তিষ্কের গঠন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এটি জৈবিক এবং পদার্থবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে একটি অসম লড়াই।”
এছাড়া, মৃত্যু পরবর্তী দেহের পচন প্রক্রিয়া এবং পুনরুজ্জীবনের সময় মস্তিষ্কের নিউরাল কাঠামো অক্ষত থাকবে কি না, তা নিয়েও বড় প্রশ্ন থেকে যায়। অনেক বিজ্ঞানী এই পদ্ধতিকে “অবাস্তব স্বপ্ন” বলে মনে করেন।
তবে এমিল কেন্জিওরা বিশ্বাস করেন, সময়ের সাথে সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে এই বাধাগুলো দূর করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “অনেক কিছুই এখনো প্রমাণিত নয়, কিন্তু তা পরীক্ষা করাই এগিয়ে যাওয়ার পথ। একসময় হৃদয় প্রতিস্থাপনকেও অসম্ভব মনে করা হতো। ক্রায়োনিক্সও একদিন সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে।”
মানুষের মৃত্যুকে পরাজিত করার আকাঙ্ক্ষা চিরন্তন। টুমরো.বাইও আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মস্তিষ্কের নিউরাল কাঠামো সংরক্ষণের পদ্ধতি উন্নয়নের এবং ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ উল্টোপূরণীয় ক্রায়োপ্রিজারভেশন চালু করার লক্ষ্য নিয়েছে। যদিও এই পদ্ধতি এখনো পরীক্ষামূলক, এটি ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
ক্রায়োনিক্স পদ্ধতি এখনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, তবে এটি মানুষের স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি দেয়। টুমরো.বাইও যেমন পুনরুজ্জীবনের এক সাহসী স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তেমনি এই ধারণা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। মৃত্যুকে পরাজিত করার এই স্বপ্ন কি একদিন বাস্তব হবে? সময়ই এর উত্তর দেবে!