ঢাকা, ১৩ মার্চ – ‘আমাদের জাহাজে অ্যাটাক হইছে। জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুক্তিপণ দেওয়া না হলে একে একে মেরে ফেলা হবে। আমাদের সবাইকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের এখনও মারধর করেনি। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত ভালো আছি, দোয়া কইরো।’
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সর্বশেষ স্ত্রী মেহরিমা সাফরিন জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন।
বুধবার সকাল ৮টার দিকে ইমোতে একটি ভয়েস রেকর্ড বার্তা আসে মেহরিমার মুঠোফোনে। সেই বার্তায় একজনের কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি জানান, ‘স্যার ভালো আছেন। সেহরি করে স্যার এখন ঘুমাচ্ছেন। কোনো মেসেজ থাকলে এই নম্বরে এসএমএস পাঠাবেন।’
স্বামীকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকায় মেহরিমা সাফরিন বলেন, ‘জাহাজের কাজ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় গভীর সমুদ্রে গেলে ১৫-২০ দিন ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ থাকে না। তখন চিন্তা হতো। নেটওয়ার্কের মধ্যে আসলেই তার সঙ্গে আবার যোগাযোগ হতো। কিন্তু এবারের বিষয়টি অনেক উদ্বেগের। তারা জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। খবরে দেখতেছি, মুক্তিপণ না পেলে তাদের নাকি একে একে মেরে ফেলবে। এ অবস্থায় আমি চরম উৎকণ্ঠায় সময় অতিবাহিত করছি। এক বছরের কন্যা সন্তান আর অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সাহায্যের জন্য কোথাও যেতে পারছি না। সরকার ও জাহাজ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুতি, যেভাবেই হোক আমার স্বামীকে জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করুন।’
প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর চিফ ইঞ্জিনিয়ার।
বুধবার দুপুরে নওগাঁ শহরের আরজি নওগাঁ এলাকায় সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী ছাড়াও কথা হয় বাবা সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম ও মা কহিনুর বেগমের সঙ্গে।
নওগাঁর সাপাহার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ছেলের নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন করে জানায়, তাদের জাহাজে জলদস্যুরা অ্যাটাক করেছে। জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর মঙ্গলবার রাতে ও আজ সকালে অন্য নম্বর থেকে ভয়েস এসএমএস পাঠিয়েছে। ভয়েস এসএমএসে জানিয়েছে, সে ভালো আছে। দস্যুরা কোনো মারধর করেনি। একটি ঘরে তাদের সবাইকে আটকে রাখা হয়েছে। জাহাজে খাবার পানির সংকট থাকায় তাদের খুব অল্প পরিমাণে পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে।’
এ সময় ক্ষোভপ্রকাশ করে আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘জাহাজ কোম্পানির গাফিলতির কারণেই জাহাজটিতে দস্যুরা আক্রমণ করেছে। কোটি কোটি টাকার মালামাল বহন করে অথচ সেই জাহাজে কোনো কোস্ট গার্ড নিয়োগ দেওয়া নেই। কোস্ট গার্ড থাকলে জলদস্যুরা এত সহজে আক্রমণ করতে পারতো না। এর আগেও ওই কোম্পানির জাহাজে দস্যুরা আক্রমণ করেছে।’
মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘এখন আল্লাহর ওপর ভরসা রাখছি আমরা। আল্লাহ যেন সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ জাহাজের সবাইকে সবার মায়ের বুকে ভালোভাবে ফিরিয়ে দেন। এছাড়াও আমরা প্রধানমন্ত্রী ও কোম্পানির কাছে অনুরোধ জানাবো তারা যেন খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়। মা হিসেবে এটাই আশা।’
১৯৯৪ সালে নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন সাইদুজ্জামান। পরে মেরিন একাডেমিতে পড়ালেখা শেষে ২০০১ সালে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৩ সালে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হন।
সাইদুজ্জামান ২০ বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজে কাজ করছেন। এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ এস আর শিপিং লিমিটেড কোম্পানির একটি জাহাজ।
মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করেছে জলদস্যুরা। তারা সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৩ মার্চ ২০২৪
