ইসরায়েলের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই কয়েক ডজন গাজাবাসী সোমবার (১১ মার্চ) রমজানের প্রথম দিন তাদের নামাজ আদায় করেন। নামাজের নিয়তে হাত বেঁধে একজন ইমামের পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, কিছু ফিলিস্তিনি পুরুষ নামাজ আদায় করেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, এর আগে রোজার মাসে মসজিদের ধংসস্তুপের মধ্যে নামাজ আদায়ের এমন দৃশ্য কখনো দেখেনি ফিলিস্তিনবাসী।
কিন্তু, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলজুড়ে অস্থায়ী শিবিরে বসবাসকারী অনেকেই নামাজে অংশ নিতে পরেননি। তারা তাদের পরিবারের জন্য কিছু খাবারের সন্ধানে রাস্তায় নামেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযানে খান ইউনিসে নিজ পরিবারের জন্য তৈরি করা এক বাড়ির মালিক জাকি হুসেইন আবু মনসুর বলেন, ‘আমার ইচ্ছে হয়, বিমানগুলো আমার ওপর বোমা ফেলুক এবং আমি তাতে মারা যাই।’
৬৩ বছর বয়সি এই মনসুর এএফপিকে বলেন, ‘এই জীবনের চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। কখনও কখনও আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাজারে দেখি, কিন্তু আমরা সেগুলো কিনতে অক্ষম।’
এই রমজানে গাজায় বঞ্চনার রূপই যেন স্বাভাবিক হয়ে দেখা দিয়েছে। রাফাহ’র বাজারে খাদ্য সামগ্রীর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কয়েকটি দোকানে ঐতিহ্যগতভাবে রমজানে বিক্রি হওয়া ‘কাতায়েফ’ নামে এক ধরনের মিষ্টান্ন পাওয়া যাচ্ছে।
রোজার মাসে সাধারণত রাস্তায় যে উজ্জ্বল আলো ও সাজসজ্জা শোভা পায়, তা স্পষ্টতই অনুপস্থিত। তবে কিছু কিছু স্টলে রমজানের ফানুস প্রদর্শন করা হচ্ছে।
গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া ও বর্তমানে রাফাহতে আশ্রয় নেয়া ৩৯ বছর বয়সি মাইসা আল-বালবিসি বলেন, ‘আমরা শাকসবজির দামও দিতে পারি না, ফলের কথা ছেড়ে দিন।’
দুই সন্তানের মা তার তাঁবুর কাছে এএফপিকে বলেন, ‘সবকিছুই খুব দামি। বাচ্চাদের ও আমার জন্য আমি কিছুই কিনতে পারছি না। এমনকি সবচেয়ে সাধারণ জিনিসের দামও আকাশচুম্বী হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন সামরিক অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা এই বছর রমজান পালন করছে।
সরকারি ইসরায়েলি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, হামাসের ওই অভিযানে প্রায় ১ হাজার ১৬০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
এদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অবিরাম হামলায় অন্তত ৩১ হাজার ১১২ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
বাস্তুচ্যুতদের জন্য জনাকীর্ণ শিবিরে বাধ্য হয়ে বসবাসকারিদের খাদ্য ঘাটতি ও অস্বাস্থ্যকর অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনযাত্রার বাস্তবতা পবিত্র মাসের উৎসবের আমেজকে ম্লান করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, রাফাহ-তে আশ্রয়প্রার্থী দেড়কোটি মানুষের বেশিরভাগই খাবার, পানি ও ওষুধ পাচ্ছে না। এর আগে, ইসরায়েল ও মিশরের গাজা উপত্যকার দীর্ঘ অবরোধ সত্ত্বেও, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো পাওয়া যেত।
এবার রমজানের প্রথম দিনে সূর্য উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাফাহজুড়ে বিমান হামলার ধোঁয়া দেখা যায়। ৫০ বছর বয়সি আউনি আল-কায়য়াল বলেন, তিনি জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মৃতদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স দেখতে পান।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘রমজানের শুরুটা ছিল দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক, সর্বত্র রক্তের দুর্গন্ধ। আমি আমার তাঁবুতে জেগে উঠেছি এবং এ অবস্থা দেখে কাঁদতে শুরু করেছি।’