মালদ্বীপে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত ড. নাজমুল সম্পর্কে যা জানা গেল | চ্যানেল আই অনলাইন

মালদ্বীপে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত ড. নাজমুল সম্পর্কে যা জানা গেল | চ্যানেল আই অনলাইন

এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ

মালদ্বীপে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তরুণ শিক্ষাবিদ ড. মো. নাজমুল ইসলাম। শিক্ষাজীবনে তুমুল মেধার স্বাক্ষর রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ শিক্ষার্থী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সকলের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছেন। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে অনেকেই প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাকে। আবার কেউ শুধু বয়স কম হওয়ার কারণে (৩৩ বছর) সমালোচনা করছেন।

কর্মজীবনে ড. নাজমুল ইসলাম তুরস্কের আঙ্কারা ইলদিরিম বেয়াজিট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। নোয়াখালীর বাসিন্দা নাজমুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন ইলদিরিম বেয়াজিট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। নাজমুল তার বহুমুখী প্রতিভা, প্রজ্ঞা এবং সংগ্রামী জীবনের জন্য দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। তার নিয়োগকে বাংলাদেশের কূটনীতিতে এক নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত ২৭ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ড. নাজমুল ইসলামকে মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাই কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তাকে অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। এরপর গত ৩ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আবুল হাসান মৃধার সাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ন্যাস্ত করে মালেতে হাই কমিশনার হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণের সময় ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তরুণ শিক্ষাবিদ ড. মো. নাজমুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টার অভিযোগে ২০১৩ সালে ঢাবিতে ব্যাপক নির্যাতনের পর তার হাত-পা ভেঙে দেয় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। ঘটনার পর তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যান। পরে সেখানেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। জীবনের কঠিন অভিজ্ঞতা তাকে ভূ-রাজনীতির গভীর অনুসন্ধানে উৎসাহিত করে, যা তাকে বিশ্ব মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এজন তরুণ শিক্ষাবিদ ও গবেষক হিসেবে তার অবদান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। তার লেখা বহু গ্রন্থ ও গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে, যা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন এমআইটি, হার্ভার্ড এবং অক্সফোর্ডের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। তার অন্যতম আলোচিত একটি তত্ত্ব হলো ‘পাওয়ার অব বন্ডিং’, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষেত্রে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।

ড. নাজমুল তুরস্কে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি দেশটির পার্লামেন্টে ফরেন রিলেশন্স অ্যান্ড প্রটোকল ডিপার্টমেন্টে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। শতবছরের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি হিসেবে তার এই নিয়োগ ছিল একটি বিরল সম্মান। এর বাইরে ড. নাজমুল ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এর ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের সাউথ এশিয়া বিভাগের গেস্ট লেকচারার হিসেবে অধ্যাপনা করছেন।

এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ, ওআইসি এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানে তার কূটনৈতিক ও একাডেমিক উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সিভিল সোসাইটিতে আন্দোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন ড. নাজমুল ইসলাম। তার এই সাহসী ভূমিকা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।

Scroll to Top