প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ফোন করে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হবে বলে প্রথমে প্রলোভন দেওয়া হতো। বিশ্বাস অর্জনের পর ফোন করে বিভিন্ন সংখ্যার সঙ্গে পিন নাম্বারের সংখ্যাটি যোগ-বিয়োগ করে ফলাফল জানাতে বলা হতো।
যেহেতু সরাসরি পিন নাম্বার চাইছেনা তাই সরল বিশ্বাসে যোগ-বিয়োগের পর প্রাপ্ত ফলাফল জানিয়ে দিচ্ছেন ভুক্তভোগী। অভিনব এই কৌশলে পিন নাম্বার নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল একটি চক্র।
এক অ্যাডভোকেটের মেয়েকে উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে এ প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশের ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মো. সাজ্জাদ হাওলাদার (২৬) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার সাজ্জাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন এবং ৩টি সিম উদ্ধার করা হয়।
ডিবি বলছে, ফরিদপুরের সাজ্জাত বর্তমানে ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক টাকা উপার্জন করতে এলাকার সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বিকাশ/নগদের টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল রপ্ত করে সাজ্জাদ। পরে তারা সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলে ব্ল্যাক মেইলিং বা বৃত্তির টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।
রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, ভুক্তভোগী এক অ্যাডভোকেটের মেয়ে গতবছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। গত ২২ জানুয়ারি ওই অ্যাডভোকেটের ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেখানে জানানো হয় ভালো রেজাল্টের জন্য তার মেয়ে প্রতিমাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে। এজন্য উল্লেখিত ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি নির্ধারিত নাম্বারে ফোন করলে বকশিবাজার শিক্ষা বোর্ডের অফিস বলে জানায়। এ সময় তার মেয়ে প্রতিমাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে ৭ মাস এবং ১ বছর পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাসিক ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে বলে জানানো হয়।
এ সময় ভুক্তভোগীর ব্যাংকের নাম, হিসাব নম্বর ও শাখার নাম জানতে চায়। যে একাউন্টে মেয়ের স্কলারশিপের টাকা জমা হবে সেজন্য একটি বিকাশ নম্বর ও মেয়ের মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি নম্বর জানতে চায়।
ভুক্তভোগী তথ্য দিলে তাকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফোন করে আরও কিছু তথ্য চাইবে বলে জানানো হয়। পরে ভুক্তভোগীর বিকাশ নাম্বারে বিভিন্ন মেসেজ আসে এবং একাধিক কোড ভুক্তভোগী সরবরাহও করেন। এক পর্যায়ে ফোন করে মোবাইলে ক্যালকুলেটর দেখতে বলে। নির্দিষ্ট একটি নাম্বারে সঙ্গে অপর একটি নাম্বার এবং বাদীর বিকাশের পিন যোগ করে যোগফল জানতে চাইলে ভুক্তভোগী যোগফল জানান।
তখন তাকে ১২ ঘণ্টা তার বিকাশ লেনদেন বন্ধ রাখতে বন্ধ রাখতে বলা হয় এবং অ্যাকাউন্ট চেক করতেও নিষেধ করা হয়। সন্দেহ হলে ১০-১৫ মিনিট পর ভুক্তভোগী বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন তার এক লাখ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। এভাবে পরে আরও একলাখ এবং ৮০ হাজার টাকাসহ মোট ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। পরে মামলার তদন্তে নেমে সাজ্জাতকে গ্রেফতার করে ডিবি সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ।
হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করে বিকাশ/নগদ অফিসের লোক আবার কখনো শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করে প্রতারণা করে আসছিল। টার্গেটকৃত ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জন করে বিকাশ/নগদ একাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো।
তাই বিকাশ/নগদ একাউন্টের তথ্য, পাসওয়ার্ড অপরিচিত কাউকে না দিতে অনুরোধ করেছেন। আর প্রতারিত হলে পুলিশের আশ্রয় নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইমে দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. সোলায়মান মিয়া ও সহকারী কমিশনার (এসি) শিপ্রা রানী দাস।