নয়াদিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর – ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যে সহিংসতা ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অবস্থায় রাজ্যটির তিনটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এনই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও লাইভ মিন্ট।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে মণিপুরের ইম্ফল পূর্ব ও ইম্ফল পশ্চিম জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহতি, ২০২৩-এর ১৬৩ ধারার অধীনে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে লাইভ মিন্ট বলছে, মণিপুরে নতুন করে সহিংসতার মধ্যে রাজ্যের ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং মণিপুরের থাউবাল জেলায় আজ বেলা ১১টা থেকে সর্বাত্মক কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাসিন্দাদের তাদের বাসস্থানের বাইরে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর এই আদেশ জারি করা হলেও পরে তা ১০ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল।
তবে, এই শিথিলতা এখন ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ‘এখন, এই বিষয়ে জারি করা সমস্ত পূর্ববর্তী আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) কারফিউ শিথিলকরণের সময়কাল বেলা ১১টা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে’। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ পূর্ণ বলবৎ রয়েছে।
স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পিএইচইডি, প্রেস এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং আদালতের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকবেন। এছাড়া পৌরসভার কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ কর্মী, পেট্রোল পাম্পের কর্মী, ফ্লাইটের যাত্রী এবং মিডিয়া কর্মীদেরও চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
লাইভ মিন্ট বলছে, রাজ্য সরকারের ডিজিপি এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের পরিকল্পনা করার প্রেক্ষিতে ইম্ফলের দুটি জেলায় কারফিউয়ের এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে এই বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে শিক্ষার্থীরা।
একইভাবে, থাউবালে সোমবার আয়োজিত ছাত্র বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠার পর সেখানেও বাইরে বের হওয়া ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মূলত সোমবার ওই বিক্ষোভের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মণিপুর সরকার আগামী পাঁচ দিনের জন্য রাজ্যে মোবাইল ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে একটি নোটিশও জারি করেছেন। খবর ডেকান হেরাল্ডের।
খবরে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কর্তৃক জারিকৃত নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা ঘৃণাত্মক বক্তৃতা ও ছবি ছড়িয়ে দিয়ে সহিংসতা উস্কে দিতে পারে। তারা যেন সেটি করতে না পারে, সে কারণে মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অস্থিরতার মধ্যে সোমবার রাজ্যের সকল স্কুল ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মণিপুরের স্কুল এডুকেশনের ডিরেক্টর।
এদিকে, ছাত্র-জনতার এই বিক্ষোভে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে বীরেনের পদত্যাগের দাবিও জোরালো হচ্ছে। এতদিন মৈতেইরা তাঁকে সমর্থন করে এলেও সম্প্রতি ওই জনগোষ্ঠীও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছে। মৈতেই ও নাগা বিধায়কদের একটি দল দিল্লিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বীরেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। কুকিরা প্রথম থেকেই এই দাবিতে সরব। পদত্যাগের দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরাও।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪