ভালোবাসা দিবস মানেই আনন্দের দিন। তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব সহ সব বয়সী মানুষের কাছেই একটি বিশেষ দিন হয়ে ওঠে। ভালোবাসা দিবসে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যেতে সকলেই চায়। কিন্তু এই শহরে ঘুরতে যাওয়ার জায়গাটাই বা কোথায়? তবে একটু খোঁজ করলেই জায়গা পাবেন। শহর এবং শহরের আশপাশে এমনকিছু জায়গা আঝে যেখানে প্রিয় মানুষের হাত ধরে কাটিয়ে দিতে পারেন বিশেষ এই দিনটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এই দিনে আনন্দ মুখর হয়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর চারুকলা ইন্সটিটিউট এর প্রাঙ্গণটি অনেকেরই পছন্দের জায়গা। যায়নি। টি এস সি এলাকাটি সবসময়ই তরুণদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে থাকে। এরই মাঝে নিজেদের আলাদা করে নেন কেউ কেউ। টি এস সির ভেতরে বারান্দায় বা মাঠে বসে অনেকেই সময় কাটাতে পছন্দ করেন। তারুণ্য মুখরিত এলাকাটিতে বয়স্ক মানুষও যেন বয়স হারিয়ে তরুণ হয়ে যেতে চান। শাহবাগে অবস্থিত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি শুধু যে বই পড়ুয়াদের জায়গা তাই নয়, তরুণদের আড্ডা-স্থলও বটে। গ্রন্থাগারের সিঁড়ি রীতিমত বিখ্যাত জায়গা আর সেখানে যদি জায়গা না হয়, তাহলে একটু সামনে এগুলে ছায়াঘেরা বেশ একটি জায়গা আছে বসার মত। পাশে গ্রন্থাগার কর্মী ও অন্যান্যদের জন্য একটা ক্যান্টিনও আছে, যেখান থেকে হালকা কিছু নিয়েও খেতে পারেন। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হচ্ছে একুশে বইমেলা। চাইলে এই বইমেলায় প্রিয় মানুষকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন। মেলা থেকে কিনে দিতে পারেন প্রিয় লেখকের লেখা কোনো বই।
চন্দ্রিমা উদ্যান : সংসদ ভবনের পাশেই রয়েছে চন্দ্রিমা উদ্যান। কৃত্রিম লেক আর গাছ গাছালির ছায়াঘেরা জায়গাটি হতে পারে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে বসার একটি ভাল জায়গা।
মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন : মিরপুরে অবস্থিত এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি বিশাল। সেখানে রয়েছে দেশি বিদেশি অনেক গাছ আর জায়গা যেখানে আপনি একটু খানি বসে সময় কাটাতে পারেন। তবে একটু খেয়াল রাখবেন যেন মূল এলাকা ছেড়ে ভেতরে কোথাও চলে না যান। তাহলে আনন্দের চাইতে বিপত্তি বেশি হয়ে যাবে।
মিরপুর চিড়িয়াখানা : মিরপুর চিড়িয়াখানা জায়গাটি হয়ত রোমান্টিক মনে নাও হতে পারে, কিন্তু এই ইট কাঠ পাথরের শহরে একটা প্রাকৃতিক পরিবেশই বা কোথায় পায় মানুষ! চিড়িয়াখানা জায়গাটি অনেক খানি বড়, বিভিন্ন রকম গাছ পালা, লেক ইত্যাদি সহ বেশ চমৎকার একটি পরিবেশ রয়েছে। আর বিভিন্ন জন্তু জানোয়ার দেখার মজা তো আছেই।
মিরপুর বেড়িবাঁধ : মিরপুর বেড়িবাঁধে এলে হারিয়ে যেতে পারেন ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত হাইওয়েতে। দেখতে পাবেন দু’পাশে গাছের সারি, দিগন্ত বিস্তৃত খোলা প্রান্তর, দূরে সবুজ গ্রাম আর রূপালি পানির নদী। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ভাসমান রেস্তোরা, চায়ের টং দোকান এবং বিনোদন পার্ক। সেখানেও সময় কাটাতে পারেন। রয়েছে অনেক পুরনো কিছু বটগাছ। তবে খেয়াল রাখবেন আলো থাকতে থাকতে এখান থেকে চলে আসাটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে। একটু অন্ধকার হলেই ছিনতাই সহ নানান ধরনের বিপদে পড়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
সোনার গাঁ : বাংলার এক প্রাচীন রাজধানী সোনার গাঁ, যেখানে আপনি এক দিনে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। উপভোগ করার মত আছে অনেক কিছুই। জাদুঘরের ভেতরে রয়েছে প্রধান ফটকে দুজন অশ্বারোহী, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য, লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সদ্য নির্মিত জয়নুলের আবক্ষ ভাস্কর্য, ক্যান্টিন, লোকজ রেস্তোরা, সেমিনার হল, ডাকবাংলো, কারুশিল্প গ্রাম, কারুপল্লি, জামদানি ঘর, কারু মঞ্চ, কারু-ব্রিজ, মৃৎশিল্পের বিক্রয়কেন্দ্র। এছাড়াও গ্রামীণ উদ্যান, আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন লেক, বড়শিতে মাছ শিকার. নৌকায় ভ্রমণ ও বনজ, ফলদ, ঔষধিসহ শোভাবর্ধন প্রজাতির বাহারি বৃক্ষরাজি ইত্যাদিও আপনাকে দিতে পারে অসাধারণ একটি সময়। এছাড়াও আছে পানাম নগরী, ভগ্নপ্রায় এই জায়গাটিতে পুরনো সব বাড়ি আর বিভিন্ন স্থাপনার মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতে আপনার অনুভূতিটাই অন্যরকম হয়ে যাবে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় : এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বহু ভ্রমণকারীদের প্রিয় স্থান। দিনে গিয়ে দিনে ঘুরে আসা খুবই সহজ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হতে পারে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে এক দিনের একটি গন্তব্য। অসংখ্য পুকুর, ঝিল আর সবুজের সমারোহ প্রজাপতি আকৃতির এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বানিয়েছে পাখি আর প্রজাপতির অভয়ারণ্য। সারা বছরই উৎসব লেগে থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। তবে শীতের সময়টা রীতিমতো চাঁদের হাট বসে যায় এখানে। প্রকৃতির ছায়ার পাশাপাশি বটতলার খাবারের জন্যও প্রসিদ্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। হরেক রকম ভর্তা আর দেশীয় মাছের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেতে অনেকেই আসেন এখানটায়। বিশেষ দিনের স্মৃতিতে ঝকঝকে কিছু মুহূর্ত বন্দি করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক : এশিয়ার বৃহত্তম সাফারি পার্কটি যে গাজীপুরে, সেটা হয়ত আমরা জানিই না। ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল গড়ে ৩৬৯০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়ে এই আধুনিক জীবজন্তুদের অভয়ারণ্য। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ১২২৫ একর জায়গা নিয়ে কোর সাফারি, ৫৬৬ একর জায়গা নিয়ে সাফারি কিংডম, ৮২০ একর জায়গা নিয়ে বায়ো-ডাই ভার্সিটি, ৭৬৯ একর এলাকা নিয়ে এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি এবং ৩৮ একর এলাকা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। পার্কে বন ও অবমুক্ত প্রাণীর নিরাপত্তার জন্য ২৬ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকগণ বাস বা জীপে বসে ঘুরে বেড়ানো অবস্থায় বন্যপ্রাণী দেখতে পারেন। পার্কে বাঘ, সিংহ, ভালুক চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, ওয়াইল্ডবিষ্ট, উটপাখি, ইমু প্রভৃতি রয়েছে যারা স্বাধীনভাবে পার্কে ঘুরে বেড়াতে পারে।
দিয়া-বাড়ি : ঢাকাবাসীর একটি পছন্দের বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়েছে উত্তরার দিয়া বাড়ি। শহরের কোলাহল থেকে দূরে নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত একটি স্থান দিয়া বাড়ি। উত্তরার সেক্টর ১৫ তে অবস্থিত এই স্থানটি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বেড়াবার জন্য চমৎকার জায়গা। দিয়া বাড়িতে খাবার ব্যবস্থা খুব ভালো। অনেকগুলো দোকান আছে। আপনার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে আসতে পারেন সেখান থেকে।
হাতির-ঝিল : ইট-কাঠ আর জ্যামের নগরী ঢাকার এক ব্যতিক্রমী সুন্দর জায়গা হাতির ঝিল। বিকেল থেকেই ভ্রমণকেন্দ্রে পরিণত হয় হাতির ঝিল। শান্তি ও স্বস্তির খোঁজে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এখানে আসেন। সন্ধ্যায় বাহারি আলোয় সেজে ওঠে হাতির ঝিল। এর পাশাপাশি হাতির-ঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি রাইড হতে পারে আর একটা চমৎকার বিনোদন।
শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকার ঠিক ভেতরেই একটা নিরিবিলি সময় কাটাবার জন্য চমৎকার জায়গা হতে পারে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবার কারণে এই জায়গাটা তার প্রাকৃতিক ছোঁয়া হারিয়ে ফেলেনি।
ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্র সরোবর : যে জায়গাটির কথা না বললে লেখাই সম্পূর্ণ হয় না, তা হল ধানমন্ডি লেক। এই লেক আর লেকের পার্শ্ববর্তী জায়গা গুলো সবসময়ই বিভিন্ন মানুষ দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, এর পাশাপাশি বিশেষ দিনগুলোতে তরুণদের ভিড় দেখা যায় রবীন্দ্র সরোবর এর মুক্ত মঞ্চ এলাকায়।
এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্তোরা ভালবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্যাকেজ অফার করছে। কোন স্কাই ভিউ রুফটপ রেস্তোরায় আপনি আপনার ভালবাসার মানুষটিকে পাশে নিয়ে এক কাপ কফি খেতেই পারেন। খিলগাঁও তালতলা এলাকায় আপনি পাবেন বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরার এক বিশাল সমারোহ। বেইলি রোড, ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড, গুলশান এবং বনানী এলাকা এবং সম্প্রতি ৩০০ ফুটের রেস্টুরেন্টগুলো। ৩০০ ফুটের রেস্টুরেন্টগুলোতে খাওয়ার পাশাপাশি ঐ এলাকায় বেড়াতেও যেতে পারেন। নগরীর কোলারহল থেকে মুক্ত পরিবেশ পেতে চাইলে প্রিয় মানুষকে নিয়ে লং ড্রাইভেও যেতে পারেন। সময়টা খারাপ কাটবে না। তবে সবকিছুর আগে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন তা হলো আপনার ও আপনার প্রিয় মানুষটির নিরাপত্তার বিষয়। বিশেষ স্থানে গিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পরার চেয়ে সাধারণ একটি নিরাপদ জায়গা অনেক বেশি কাম্য হতে পারে। কোন নিরিবিলি এলাকায় গেলে চেষ্টা করুন সন্ধ্যা হয়ে যাবার আগেই চলে আসতে।
ভালোবাসার দিনে প্রিয়জনের হাত ধরে… – আনন্দ আলো

Related Posts
Alicia Basir Presents New Voodoo Love Spells for Romantic Success
December 21, 2025
Qlychee Launches New French-Language Website
December 20, 2025

পুরো আইপিএল খেলতে পারবেন মোস্তাফিজ?
December 20, 2025