আহমেদ জামান শিমুল
ঈদের ছবি ‘ওমর’-এর ট্রেলার ও পোস্টারে রহস্য হিসেবে হাজির হয়েছেন তানজিলা হক। এর আগে অভিনয় করেছেন ‘নবাব এলএলবি’, ‘রেডিও’ ও ‘কসাই’-এ। ২০১৮তে নির্মাতা অনম বিশ্বাসের হাত ধরে শোবিজে যাত্রা শুরু করা এ শিল্পী বর্তমানে পড়াশোনা করছেন খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে। সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুলকে নবীন এ নায়িকা জানালেন ওমরের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার গল্প ও অভিনয় নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
- পোস্টার, ট্রেলার থেকে ধারণা করতে পারছি ‘ওমর’-এ আপনার চরিত্রটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরকে কিছুটা পূর্বাভাস দেওয়া যায় কি?
আপনারা যেভাবে দেখেছেন ওরকমই। আসলেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছি সিনেমাটিতে। ভিতরে অনেককিছু লুকিয়ে আছে চরিত্রটায়, যার ব্যাপারে এখন কোনকিছুই প্রকাশ করা যাবে না। যারা সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটা দেখবেন তারা বুঝতে পারবেন এর মধ্যে কী লুকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। আমি দুঃখিত।
- চরিত্রের পূর্বাভাস না হয় না দিলেন, ছবিটির সঙ্গে সম্পর্কতার গল্প নিশ্চয় আমাদের বলা যায়। অডিশন দিতে হয়েছিলো কি?
না, না। অডিশন এরকম কিছু দিতে হয়নি। আমি ছোটবেলা থেকে অনেক টিভিসি ওভিসি করেছি। যাদের কাজ আমি চোখ বন্ধ করে করি সেরকম আমার দুজন ভাইয়া আছে─রুবাইয়াত ও মেজবাহ ভাইয়া। তারা আমাকে প্রথমে ছবিটিতে কাজ করার ব্যাপারে বলেন। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা যদি ভালো মনে করো তাহলে আমি অবশ্যই কাজটা করবো। আমি তখনও জানি না এটা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ভাইয়ের কাজ। একদিন আমাকে মুভির অফিসে ডাকা হলো। তখন আমি জানতে পারলাম এটা তিন রাজ ভাইয়ের (মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, শরিফুল রাজ ও রাজু রাজ) কাজ। অফিসে পরিচালক রাজ ভাই আমাকে পুরো গল্প শোনালেন। তিনি আমাকে বললেন, তানজিলা আমি চাই তুমি কাজটা করো, বাকিটা তোমার ইচ্ছে। বাসায় এসে আমি রাজ ভাই ও মেজবাহ ভাইয়া দুজনকেই বলে দিই, কাজটা আমি অবশ্যই করতে চাই। যেহেতু গল্পটা অনেকটা সুন্দর। এভাবে কাজটা করা। আমার কোনো অডিশন, দ্বিতীয়বার যাওয়ার ব্যাপার ছিল না। তারা একবারে আমাকে কাস্ট করে দিয়েছেন, আমিও একবারে তাদের হ্যাঁ করে দিয়েছি। খুবই সাধারণভাবে কাজটা আমার কাছে এসেছে।
- মোস্তফা কামাল রাজ ও শরিফুল রাজদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন কি? নাকি তাদের কাছ থেকে অনেক সহয়তা পেয়েছেন?
পরিচালক-সহশিল্পী দুজনেই আমার কাছে নতুন। আমিও তাদের কাছে নতুন। তারা আমাকে এত আন্তরিকতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়েছেন, আমি অনেক কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। আমি বারবার বলি, মোস্তফা কামাল রাজের কাছে কৃতজ্ঞ তিনি আমাকে এত বড় একটা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের আগে কাজ করা হয়নি। এরপরও তিনি আমার উপর বিশ্বাস রেখে আমাকে কাজটাতে নিয়েছেন। শরিফুল রাজ ভাইয়ের কথা কী বলবো! এত এনার্জিটিক একজন মানুষ। তার সঙ্গে কাজ করতে গেলে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে এমনি এমনি দৃশ্যটা নেমে যায়। আন্তরিকতার সহিত কাজটা করেন। কোনো চ্যালেঞ্জ বা এরকম কিছুই ছিল না আসলে। মজায় মজায় কাজটা হয়ে গেছে। খুব ভালো অভিজ্ঞতা ওমরে।
- শুটিংয়ের সময়ের মনে রাখার মতো কিছু অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।
শুটিংয়ে একজন একজন করে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল আর আমাদের পরিচালক ভাইয়ার গলা একদমই বসে গিয়েছিল। তিনি কোন কথায় বলতে পারছিলেন না। সবাই আশেপাশে কাজ করছিল, উনি চুপচাপ দেখছিলেন। তিনি দরকারে সময় কানে কানে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।
- ওনার কি ঠাণ্ডা লেগেছিল, নাকি অন্য কোনো সমস্যা হয়েছিল?
হ্যাঁ, ঠাণ্ডা লেগে গলা একদমই বসে গিয়েছিল। শুধু উনি না, শরিফুল রাজ ও আবু হুরায়রা তানভীরা ভাইয়ারাও অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। এরপরও তারা নিজেদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়েছেন অভিনয়টা পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য। তাদের কাছ থেকে এগুলো শেখার আছে।
- পরিচালক বা ইউনিটের অন্য কারো কাছে বকা খেয়েছেন?
বকা তো দূরের কথা, বললাম না আমরা অনেক আনন্দে আনন্দে শুটিং করেছি। রাজ ভাইয়া অ্যাকশন বলে দৃশ্য শুরু করে দিতেন, আমরা আমাদের মত দৃশ্য করে ফেলতাম। আমি যতদিন শুটিং করেছি, পরিচালক রাজ ভাইয়াকে রাগই করতে দেখেনি। উনি খুব ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করেন।
- প্রথমবারের মত ঈদ উৎসবে ছবি মুক্তি, শরিফুল রাজের সঙ্গে অভিনয়, শাকিব খানের ছবিসহ ডজনখানেক ছবি রয়েছে আপনাদের সঙ্গে —সব মিলিয়ে কি কোন ভয় কাজ করছে, নাকি অতিরিক্ত উত্তেজনায় নির্বিকার থাকছেন?
ভয় বলতে, একটু নার্ভাসনেস আছে। কারণ আমাদের এ ছবির যারা অভিনয় করেছেন তারা এত দক্ষ, অভিজ্ঞ ও গুণী অভিনয়শিল্পী—ওনাদের সঙ্গে পর্দা শেয়ার করার সুযোগ পেয়েছি, এটা একটা বড় পাওয়ার বিষয় আমার জন্য। তার সঙ্গে শাকিব ভাইয়ার ছবিসহ অনেক ভালো ভালো ছবি মুক্তি পাচ্ছে, একটা নার্ভানেস তো আছেই। এবারের ঈদটা আমার জন্য অনেক বেশি অন্যরকম কারণ আমার জন্মদিন ঈদের দিন, আবার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে—এবারের ঈদটা আলাদাভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
- ছায়নট থেকে রবীন্দ্রসংগীতের উপর ৮ বছরের কোর্স করেছেন। ভবিষ্যতে কি রবীন্দ্রসংগীতের কোন অ্যালবাম করার ইচ্ছে আছে?
এভাবে ভেবে দেখা হয়নি। গান করাটা মায়ের খুব শখ। মা খুব পছন্দ করেন। শিখেছি। কিন্তু কী করবো, কীভাবে করবো—ওভাবে ভেবে কোন কিছু শেখা হয়নি।
- আপনাদের পরিবারের কেউ কি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন?
না, আমাদের পরিবারের দূর দূরান্তের কেউই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। তবে আমার বাবা একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ। উনি ওনার জীবনে প্রচুর ফুটবল, ক্রিকেট খেলেছেন। পরিবার থেকে সে সহায়তাটা পেয়েছি, কখন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।
- দর্শকদের তরফ থেকে ছবি নিয়ে পজেটিভ, নেগেটিভ দুধরনেই রিভিউ আসে। যদি নেগেটিভ রিভিউ বেশি আসে সেটাকে কীভাবে সামলাবেন—কখনও ভেবেছেন?
নেগেটিভ রিভিউ আসতেই পারে। অনেকের আমার কাজ দেখে পছন্দ হতে পারে, আবার অনেকের নাও হতে পারে—এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এটা নিয়ে ভাবনা বলতে…অবশ্যই নিজের ভুলগুলো ঠিক করবো রিভিউগুলো দেখে যেখানে ত্রুটি আছে, কমতি আছে সেখানে পূরণ করার চেষ্টা করবো। পরবর্তী কোন কাজে সেগুলো পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
- পাঁচ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান নিয়ে যেহেতু পড়াশোনা করছি, তাই একজন স্বনামধন্য পুষ্টিবিদ হবার ইচ্ছে আছে। অভিনয়ে যদি মানসম্পন্ন কাজের সুযোগ পাই তাহলে আরও ভালো কাজের চেষ্টা করবো।
সারাবাংলা/এজেডএস