ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ার আগে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ-তে অন্তত ২৫ দিনের খাবার ছিল। জিম্মি হওয়ার আগে জাহাজটিতে বিশুদ্ধ পানিও ছিল প্রচুর, প্রায় ২০০ টনের মতো। কিন্তু ক্রমেই সেটি কমে আসছে। কেননা জাহাজের খাবার ও পানির ব্যবহার এখন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশি ২৩ নাবিকের সঙ্গে যে যুক্ত হয়েছেন আরও প্রায় সমান জলদস্যু। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো-নাবিকেরা কম করে খেলেও জলদস্যুরা গিলছেন গ্রোগ্রাসে।
জলদস্যুদের বরাতে এই তথ্য দিয়েছেন মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান। জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার থেকে নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন এই ক্যাপ্টেন।
নাবিকদের বরাত দিয়ে আতিক ইউএ খান বলেন, ‘জাহাজের নাবিকেরা সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। ওরা সেহরি, ইফতার করছেন আর ব্রিজে জামাতে নামাজ আদায় করছে। জাহাজের চিফ কুক আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ৫০ জনের জন্য ২-৩ বেলা রান্না করছেন। নাবিকরা কম করে খেলেও জলদস্যুরা ভরপেট খাচ্ছেন। গতকাল (বুধবার) সবাই ব্রিজে থাকলেও আজ সবাইকে দিনের বেলা কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে রাতে সম্ভবত আবার ব্রিজেই ফিরতে হবে।’
জলদস্যুদের কারণে খাবার ও পানির ব্যবহার দ্বিগুণ হয়ে গেছে জানিয়ে আতিক ইউএ খান বলেন, ‘যে খাবার ২৫ দিন যাবে বলা হয়েছিল, সেই খাবার হয়ত ১১-১২ দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে। ২০০ টন পানি শেষ হয়ে গেলে রেশনিং বা ব্যয় সংকোচন শুরু হবে। জলদস্যুরা কি মানের খাবার বা পানি দিবে সেটা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে শিপের মত মানসম্পন্ন অবশ্যই হবে না। খাবারের পরিমাণ কমিয়েও দিতে পারে।’
খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা গেছে জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের কণ্ঠেও। বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবারকে পাঠানো এক অডিও বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘এখনো খাওয়া ধাওয়া আছে। যেহেতু জলদস্যুরাসহ আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে। আমাদের এই খাওয়া দাওয়া হয়তো ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। তারপর খাওয়া-দাওয়া যখন শেষ হয়ে যাবে, পানি শেষ হয়ে গেলে কষ্টে পড়ে যাব। এটাই আমাদের পরিস্থিতি।’
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ান কোস্ট হতে ৭ মাইল দূরে নোঙর করেছে জানিয়ে আতিক ইউএ খান আরও বলেন, ‘জাহাজের নাবিকেরাই সব দায়িত্ব পালন করেছেন, জলদস্যুরা শুধু অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে। নোঙর করতে জাহাজের সম্মুখভাগে গিয়েছিলেন চিফ অফিসার, বোসান (সারেং) আর একজন সাধারণ নাবিক।’
জলদস্যুদের সঙ্গে আরও ১৫-২০ জনের নতুন দল যুক্ত হয়েছে জানিয়ে আতিক ইউএ খান জানিয়েছেন, জাহাজে সোমালিয়া হতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ ১৫-২০ জনের নতুন দল এসেছে পুরোনোদের সঙ্গে যোগ দিতে। এদের সঙ্গে একজন ইংরেজি জানা দোভাষীও আছে। জলদস্যুদের মূল ভাষা সোমালি আর আরবি।’
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে একটি যুদ্ধ জাহাজ বাংলাদেশি জাহাজটিকে অনুসরণ করেছিল। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে ফাঁকা গুলিও করা হয়েছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে আতিক ইউএ খান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোর হতে ইউরোপীয় (সম্ভবত) একটা যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ফলো করছিল। নাম ইউরোফোর আটলান্টিক বা কাছাকাছি। সেই যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টারও টেক অফ করে আবদুল্লাহকে বেশ কবার রাউন্ড দিয়েছে, ফাঁকা গুলিও করেছে। কিন্তু জলদস্যুদের এতে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা যায়নি। যতক্ষণ নাবিকরা তাদের কাছে জিম্মি আছে ততক্ষণ কেউ আক্রমণ করার সম্ভাবনা কম, এটা ওরা জানে। পরবর্তী সময়ে একটা ভারতীয় যুদ্ধজাহাজও এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে। দুটো জাহাজই সোমালিয়া কোস্ট পর্যন্ত ফলো করে এসেছে এবং কাছাকাছি অবস্থান করছে।’