যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে আরও কিছু পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এই ঘোষণা দেন।
শুক্রবার ২৬ সেপ্টেম্বর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো বিদেশি কোম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কারখানা স্থাপন না করে, তাহলে তাদের উৎপাদিত ওষুধ আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। একই সঙ্গে সব ধরনের ভারী ট্রাকে ২৫ শতাংশ এবং রান্নাঘর ও বাথরুমের ক্যাবিনেটে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আগামী সপ্তাহ থেকে সোফা ও অন্যান্য গদিযুক্ত আসবাবপত্রেও ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে স্থানীয় উৎপাদকদের রক্ষার জন্য। তার ভাষায়, বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে এসব পণ্য এসে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে, যা আমেরিকার উৎপাদকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বৈদেশিক আমদানি থেকে স্থানীয় উৎপাদকদের রক্ষায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভারী ট্রাকের ওপর শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দেশীয় নির্মাতারা অন্যায্য বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে সুরক্ষিত থাকবে। বিশেষভাবে পিটারবিল্ট এবং ম্যাক ট্রাকস-এর মতো কোম্পানিগুলোর উপকার হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
একইভাবে, রান্নাঘর ও বাথরুমের ক্যাবিনেটের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিমাণে আমদানি এবং এর ফলে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ক্ষতি হওয়ার কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প শুল্ক আরোপের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের আপত্তি
নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স হোয়াইট হাউসকে এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। তাদের মতে, ট্রাক উৎপাদনে ব্যবহৃত অনেক যন্ত্রাংশ প্রধানত মেক্সিকো, কানাডা, জার্মানি, ফিনল্যান্ড ও জাপান থেকে আসে—যারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি নয়।
চেম্বার অব কমার্স সতর্ক করে বলেছে, এই যন্ত্রাংশ দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা বাস্তবসম্মত নয় এবং শুল্ক আরোপের ফলে উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে।
আগের সিদ্ধান্ত ও বিতর্ক
গত এপ্রিল মাসে বিদেশি পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শঙ্কা তৈরি হলে সেই সিদ্ধান্ত পরে স্থগিত করা হয়। এরপর আগস্টে নতুন শুল্ক নীতি কার্যকর শুরু হয়, যার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ইতিমধ্যে ৯০টিরও বেশি দেশ এ নীতির প্রভাবে পড়েছে।
তবে এই নীতি নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল আদালত সম্প্রতি রায় দিয়েছে যে, ভিন্ন দেশের ওপর একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করতে গিয়ে ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার জরুরি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি হয়তো অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে সীমিত সফলতা আনতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিনের বাণিজ্য অংশীদার কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিকল্প অর্থনৈতিক সম্পর্কের পথ খুঁজবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আর আগের মতো নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে নাও দেখতে পারে।
বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক অবস্থান ট্রাম্পকে কিছুটা সুবিধা দিতে পারে, তবে বর্তমান শুল্ক নীতিই যদি অর্থনৈতিক কাঠামোকে আঘাত করে, তবে এর নেতিবাচক ফল যুক্তরাষ্ট্রকেই ভোগ করতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপের প্রকৃত ফলাফল বোঝা যাবে আসন্ন কয়েক মাস নয়, বরং আগামী কয়েক বছরেই।