‘শেখ হাসিনার বারতা, নারী-পুরুষ সমতা’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জয়িতাদের চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ সম্মান, স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা প্রদান করে সমাজের সাধারণ নারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা। নারীদের জয়িতা হতে অনুপ্রাণিত করা। নারীর অগ্রযাত্রায় সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে জয়িতাদের অগ্রসর হওয়ার পথ সুগম করা।
সেই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ নির্বাচিত পাঁচ নারীকে সংবর্ধনা জানানো হয়। এছাড়া বিভাগের চারটি জেলার জেলা পর্যায়ের ১৪ জয়িতাকে সংবর্ধনা জানানো হয়।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ময়মনসিংহ এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিমে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিভাগীয় পর্যায়ের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয় এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় যৌথভাবে এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে পাঁচ ক্যাটাগরিতে এ বছর ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলা থেকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত মোট ১৯ জনের মধ্য থেকে চূড়ান্ত ফলাফলে ৫ জনকে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এবার অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসাবে ময়মনসিংহ ত্রিশালের মোছা: আনার কলি, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ময়মনসিংহ সদরের আছমা আক্তার, সফল জননী নারী নেত্রকোণা কেন্দুয়ার মোছা: নূরজাহান খানম, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নব উদ্যমী নারী ময়মনসিংহ ত্রিশালের মোসা: সালমা বেগম (মীর সালমা) ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ময়মনসিংহ সদরের শামীমা আক্তার (সুমি) সম্মাননা পান।
বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে শিশু ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি মো: শাহ আবিদ হোসেন, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ এহতেশামুল আলম ও ময়মনসিংহ মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজনীন সুলতানা বক্তৃতা করেন।
এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার পাঁচ ক্যাটাগরিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত আরো ১৪ জয়িতার মধ্যে শেরপুর জেলা থেকে মোছা: ফারজানা ববি, রেনিতা নকরেক, আশরাফুন্নিসা মুসলিমা, মোছা: দিলশাদ জাহান ডালিয়া ও সোহাগী আক্তার। জামালপুর থেকে জয়িতা হয়েছেন শাকিলা আশরাফ, মোছা: সালমা, অবিরেন নেছা, মোছা: ফাতেমা বেগম, মাসুমা ইয়াসমিন। নেত্রকোনা থেকে জয়িতা হয়েছেন সাবা নওরিন, কামরুন নাহার ও আফরোজা বেগম এবং ময়মনসিংহ থেকে আম্বিয়া খানম।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন ।দেশের অর্ধেক হচ্ছে নারী আর অর্ধেক হচ্ছে পুরুষ। এই অর্ধেক নারী জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়। তাই নারীদেরকে সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এখানে যারা জয়িতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তারা হচ্ছে সমাজের সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীর একটি প্রতীকী নাম। তাই সরকার নারীদেরকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ও ভাতা প্রদান করছে। নারীর ক্ষমতায়নে নবম বারের মত দক্ষিণ এশিয়ায় টানা শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছেন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের নারীদের সামাজিক অবস্থান অনেক ভালো আছে কিন্তু সেটা পূর্ণাঙ্গ নয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী একটি মডেল হিসেবে গণ্য হচ্ছে। নারীদেরকে উচ্চপর্যায়ে ক্ষমতায়ন দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের নারী সমাজের অগ্রগতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নারী সমাজের মধ্যে বিরাজমান সকল প্রকার বিভ্রান্তি ও আশংকা দূর করে নারীদেরকে সকল প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করার শক্তিতে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে জয়িতা নামটি দিয়েছেন এবং ২০১৩ সাল থেকে এই নাম প্রবর্তন করা হয়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নতিতে অংশগ্রহণ করতে পারলে একজন নারী দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য কাজ করতে পারবে। নারীদেরকে সর্বক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হতে হবে। আট বিভাগ থেকে ৪০ জন জয়িতা নির্বাচিত হয়েছে। সেখান থেকে আবার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মোট পাঁচজন জয়িতা নির্বাচন করা হবে।
অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক শিশু ও মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান জায়িতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন নারী বান্ধব উদ্যোগের কারণে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে নজর কারা অগ্রগতি অর্জন করতে সমর্থ্য হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীদেরকে উজ্জীবিত করতে বাংলাদেশে মোট ৬৩টি ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে আরো ৬০টি ডে কেয়ার সেন্টার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাল্যবিবাহ থেকে আমরা এখনো পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারিনি তাই এ বিষয়ে খুবই সচেতন হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। তবে নারীর কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকার অনেক সুযোগ-সুবিধা ও ভাতা প্রদান করছে। তাই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষে জয়িতাদের ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ তুলে দেওয়া হয়।